×
অনুসন্ধানें

খ্রীষ্টিয়ানের গোপনীয়তা

আত্মায় পূর্ণ জীবনকে বোঝা।

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে কেন অনেক খ্রীষ্টিয়ানরাই খ্রীষ্টানদের মত আচরণ করে না? খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করাটা কি অসম্ভব বলে মনে হয়? আপনি আপনাকে একটা গোপন কথা বলি—এটা নিজে থেকে করাটা—অসম্ভব। নিজেদের চেষ্টায় খ্রীষ্টিয়ান জীবন যাপনের চেষ্টা করাটা শুকনো মাঠে জাহাজ চালানোর মত... এটা আসলে তেমন কাজে আসে না। জাহাজটিকে কোথাও সরাবার জন্য এর নীচে জল থাকা প্রয়োজন। আর খ্রীষ্টিয়ান জীবন উপভোগের জন্য, একজন ব্যক্তির জানতে হবে কীভাবে ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। পৌল এটা জানেন যে: ‘‘যিনি আমাকে শক্তি দান করেন তাঁর মধ্য দিয়েই আমি সব কিছু করতে পারি।’’ (ফিলিপীয় ৪:১৩)

খ্রীষ্টিয় সুসংগত জীবনের একটি অন্তর্নিহিত বিষয় হল আমাদের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের জীবন প্রকাশ পাওয়া: ‘‘আমাকে খ্রীষ্টের সংগে ক্রশে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি আর জীবিত নই, খ্রীষ্টই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই দেহে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছি। তিনি আমাকে ভালবেসে আমার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন।’’ (গালাতীয় ২:২০)।

এটা ছিল শিষ্যদের সাথে খ্রীষ্টের শেষ সন্ধ্যা এবং তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে তিনি তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদেরকে তিনি একা রেখে যাবেন না: ‘‘তবুও আমি তোমাদের সত্যি কথা বলছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’ (যোহন ১৬:৭)

সাহসিকতার সাথে খ্রীষ্টিয় জীবনযাপন করবার জন্য আপনার কাছে কাউকে পাঠানো হয়েছে- তিনি হলেন পবিত্র আত্মা তিনি শুধুমাত্র স্বর্গীয় রাজ্যের তথ্য ঘরের সহায়ক নন: তিনি খ্রীষ্টের আত্মা - যিনি আপনার ভেতরে বসবাস করার জন্য এসেছেন।

পবিত্র আত্মা কে?

পবিত্র আত্মা হলেন ঈশ্বর যেভাবে পুত্র এবং পিতাও। পবিত্র আত্মাকে ঘিরে মানুষের অনেক বিভ্রান্তিমূলক একটি ভুল চিন্তা হল তারা পবিত্র আত্মাকে একক ব্যক্তিস্বত্ত্বা ভেবে থাকে। তিনি একজন ঐশ্বরিক স্বত্ত্বা যার ইচ্ছা শক্তি এবং অনুভূতি রয়েছে।

পিতা এবং পুত্রের সকল গুণাবলী পবিত্র আত্মার মধ্যে রয়েছে। তিনি সর্বশক্তিমত্তা (সর্ব শক্তিমান), সর্বজ্ঞ (সব কিছু জানেন), নিত্য (অপরিবর্তনশীল) এবং অনন্ত। তিনি হলেন পবিত্র ত্রিত্বের তৃতীয় ব্যক্তি।

পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্য কী?

পবিত্র আত্মা হলেন আপনার খ্রীষ্টিয় জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে এবং কেন তিনি এতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা দেখা যাক।

পবিত্র আত্মা আপনাকে আপনার পাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং খ্রীষ্টের প্রয়োজনকে বুঝতে সাহায্য করে (যোহন ১৬:৮-১১)। বাইবেল ব্যাখ্যা দেয় যে, পবিত্র আত্মার সাহায্য ছাড়া খ্রীষ্টিয়ানত্ব তুচ্ছ (১ম করিন্থীয় ১:১৮)। আপনার আশেপাশে যারা আছে তারা হয়ত খ্রীষ্টের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতিবদ্ধতাকে পাগলামি মনে করতে পারে! কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই এমন নয় কারণ পবিত্র আত্মা আপনাকে একটি জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের অলৌকিকতা প্রকাশ করেছেন।

পবিত্র আত্মা আপনাকে নতুন এক জীবন দান করেছেন। যীশু বলেছেন, মানুষ থেকে যা জন্মে তা মানুষ। আত্মিকভাবে জন্ম হতে হলে পবিত্র আত্মার প্রয়োজন হয় (যোহন ৩:৬)। আর ঈশ্বর তাঁর দেওয়া পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাদের অন্তর তাঁরই ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করেছেন (রোমীয় ৫:৫)। পবিত্র আত্মা নিজেও আমাদের অন্তরে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান (রোমীয় ৮:১৬)।

পবিত্র আত্মা হলেন একজন শিক্ষক এবং ক্ষমতাশালী। তিনি আপনাকে ঈশ্বরের বাক্যের সত্যতার দিকে নিয়ে যান। তিনি আপনাকে পথ দেখিয়ে বাইবেলের পূর্ণ সত্যের দিকে নিয়ে যাবেন যাতে করে আপানি এর সত্যকে বুঝতে পারেন এবং এর সত্যতার প্রয়োগ করতে পারেন। (যোহন ১৬:১৩,১৪) । তিনি আপনাকে শক্তি দেবেন এবং তাঁর সাক্ষী হওয়ার জন্য আত্মিক কার্যকারিতা দান করবেন (প্রেরিত ১:৮) । যখন আপনার মনে হচ্ছে যে আপনার কী প্রার্থনা করা উচিত বা কীভাবে প্রার্থনা করা উচিত সেটা আপনি জানেন না তখন তিনি পিতার কাছে আপনার জন্য মধ্যস্থতা করবেন (রোমীয় ৮:২৬,২৭) ।

খ্রীষ্ট পবিত্র আত্মাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন যাতে করে আপনি খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করতে পারেন! যেভাবে পৌল লিখেছেন,‘‘- যিনি যীশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছেন সেই ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন’’ (রোমীয় ৮:১১)। শুধুমাত্র পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমেই খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করা সম্ভব।

আপনি হয়ত ভাবছেন, আমার জীবনে পবিত্র আত্মার প্রয়োজন আছে! আপনি যদি খ্রীষ্টিয়ান হন তাহলে এটা ইতোমধ্যেই আপনার মধ্যে রয়েছে: ‘‘কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা যদি তোমাদের অন্তরে বাস করেন তবে তোমরা তো পাপ-স্বভাবের অধীন নও বরং পবিত্র আত্মার অধীন। পবিত্র আত্মা আপনার ভেতরেই বাস করেন, কিন্তু আপনি আপনার জীবনকে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী চালাতে পারেন না। তিনি হয়ত একজন বসবাসকারী- কিন্তু তিনি আপনার পরিচালানায় নেই।

পৌল খ্রীষ্টিয়ানদেরকে দুইটি ভাগে ভাগ করেছেন: আত্মিক খ্রীষ্টিয়ান এবং জাগতিক খ্রীষ্টিয়ান।

১. আত্মিক খ্রীষ্টিয়ান ‘‘যে লোক আত্মিক সে সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখে, কিন্তু কেউ তাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে না।’’ (১ম করিন্থীয় ২:১৫) ।

আত্মিক লোক খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছেন এবং খ্রীষ্ট কেন্দ্রীক জীবন যাপন করছেন। তিনি নিষ্পাপ নন এবং তিনিও প্রতিদিন অন্যদের মত সমস্যা এবং প্রলোভনের সন্মুখীন হন। কিন্তু জীবনের একটি পথ হিসেবে, তিনি তাঁর প্রত্যেকটি সমস্যা এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত সব কিছুর ক্ষেত্রেই খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেন। খ্রীষ্টকে সন্তুষ্ট করাই হল তাঁর একমাত্র আকাঙ্খা, এবং তিনি অন্যের সামর্থের উপর নির্ভর করেন না।

২. জাগতিক খ্রীষ্টিয়ান ‘‘ভাইয়েরা, যারা আত্মিক সেই রকম লোকদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, আমি তোমাদের কাছে সেইভাবে কথা বলতে পারি নি- খ্রীষ্টিয় জীবনে তোমরা তো একেবারে শিশুর মত, তাই তোমাদের কাছে সেইভাবেই কথা বলেছিলাম। শক্ত খাবার না দিয়ে আমি তোমাদের দুধ খেতে দিয়েছিলাম, কারণ তখন তোমরা সেই শক্ত খাবার গ্রহণ করবার অবস্থায় ছিলে না। আর এখনও তোমরা সেই অবস্থায় নেই। তোমাদের মধ্যে যখন হিংসা আর ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে তখন কি তোমরা পাপ-স্বভাবের অধীন নও? আর তোমাদের চালচলন কি একেবারে সাধারণ লোকদের মতই নয়? (১ম করিন্থীয় ৩:১-৩)।

জাগতিক বলতে ,‘‘মাংসিক;; বোঝানো হয়েছে। জাগতিক খ্রীষ্টিয়ানেরা এমন খ্রীষ্টিয়ান (তিনি কোন এক আঙ্গিকে যীশু খ্রীষ্টের কাছে নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করেছেন), কিন্তু তার জীবন নিজেকে ঘিরে এবং নিজের চাওয়া-পাওয়া নিয়েই গঠিত। তার খ্রীষ্টিয়ানত্ব নিয়ে সে হয়ত কিছু প্রমাণ দিতে পারবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার কাজ চাপা পড়ে যায় জেনেশুনে অবাধ্য হওয়া অথবা আত্মার সেবাদানের অজ্ঞতার কারণে।

আত্নিক খ্রীষ্টিয়ানত্ব থেকে জাগতিক খ্রীষ্টিয়ানত্ব কিভাবে আলাদা? এটা এমন নয় যে জাগতিক খ্রীষ্টিয়ানত্বে খ্রীষ্ট কিংবা পবিত্র আত্মার কোন কমতি থাকে- একজন আত্মিক খ্রীষ্টিয়ানের মত তারও একই আত্মিক ক্ষেত্র থাকে। কিন্তু যেখানে একজন আত্মিক লোক তার খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই খ্রীষ্টের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল থাকেন সেখানে একজন জাগতিক লোক তার নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল থাকেন। নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল হয়ে খ্রীষ্টিয়ান জীবন যাপন করাটা কোন শহরের আশেপাশে আপনার গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাবার মত ব্যর্থ একটি প্রচেষ্টা।

আত্মার নেতৃত্বে চলা

বাইবেল আত্মার ‘‘নেতৃত্বে’’ চলার বিষয়ে বলেছে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে আমরা তাঁর কথার বাধ্য হয়ে চলব: তিনি নেতৃত্ব দেবেন, আমরা অনুসরণ করব। বিষয়টা বেশ সহজ। কিন্তু স্বভাবতই আমরা অন্যের নেতৃত্বে চলতে পছন্দ করি না- এমনকি যদি ঈশ্বরও হন তাহলেও না! কিন্তু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হওয়া মানে হল নিজেদেরকে ঈশ্বরের আত্মা এবং ঈশ্বরের বাক্যের নেতৃত্বে পরিচালিত করা।

প্রতিদিনই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়: আমরা কি নিজেদেরকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় চালাব, নাকি আমরা অন্য কিছুর দ্বারা পরিচালিত হবো? ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত থাকব, নাকি আমরা যা চাই, খ্রীষ্টের বাধ্য হয়ে চলার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়ে ওঠার চেষ্টা করব? যখন পবিত্র আত্মা আপনাকে পূর্ণতা দান করেন, তখন তিনি আপনার চিন্তা-ভাবনা এবং কাজকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তখন পবিত্র আত্মায় পূর্ণ থাকার সময়ে আপনি কোনভাবেই ঘৃণা, ভয় অথবা অন্য কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। এখানে এগুলো আসার কোন সুযোগই নেই।

‘‘তাই বলি, তোমরা বুদ্ধিহীন হয়ো না, বরং প্রভুর ইচ্ছা কি তা বুঝে নাও। মাতাল হয়ো না, তাতে উচ্ছঙ্খল হয়ে পড়বে। তার চেয়ে বরং সম্পূর্ণভাবে পবিত্র আত্মার অধীনে থাক ‘’ (ইফিষীয় ৫: ১৭)। অ্যালকোহল যেমন কৃত্রিম পরিবর্তন আনে সেটার বিপরীতে পবিত্র আত্মায় পরিবর্তনগুলো কৃত্রিম নয়। তারা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। বাইবেল এটাকে বলে যে এইসব দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনগুলো খ্রীষ্ট কেন্দ্রিক জীবন যাপনের ফলস্বরূপ: ‘‘কিন্তু পবিত্র আত্মার ফল হল-ভালবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহ্যগুণ, দয়ার স্বভাব, ভাল স্বভাব, বিশ্বস্ততা,নম্রতা ও নিজেকে দমন। এই সবের বিরুদ্ধে কোন আইন নেই।’’ (গালাতীয় ৫:২২,২৩)।

আমি কীভাবে পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারি?

পবিত্র আত্মার নিয়ন্ত্রণ হল আমাদের সিদ্ধান্ত। এটা হল স্বেচ্ছাধীন, কিন্তু এটি অজ্ঞাতসারে না। লোকেরা নতুন বিয়ারের প্যাকেটগুলো নিয়ে বা মদের দোকানে কাজ করলেই তারা মাতাল হয়ে পড়ে না। মদ্যপান করার পরই সবকিছু ঝাপসা মনে হয়। একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে আপনাকে ঘিরে অনেক বাইবেল এবং খ্রীষ্টিয়ান থাকবে যারা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ নয়। অথবা আপনি একা থাকতে পারেন, কিন্তু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে।

আপনি একটি প্রার্থনার মাধ্যমে পবিত্র আত্মাকে অনুসরণ করার আকাঙ্খা প্রকাশ করতে পারেন। এখানে এমন একটি প্রার্থনা দেওয়া আছে যেটা আমাকে প্রায়ই সাহায্য করেছে:

‘‘প্রিয় পিতা, তোমাকে আমার প্রয়োজন। আমি স্বীকার করছি যে আমি নিজেই নিজের জীবন পরিচালনা করেছি আর এরই ফলস্বরূপ আমি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে খ্রীষ্টের ক্রশে মৃত্যুবরণের মাধ্যমে তুমি আমার সকল পাপ ক্ষমা করেছ। এখন আমি খ্রীষ্টকে আমার জীবনের সিংহাসনে তাঁর স্থানে আসবার আবারও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যেভাবে তুমি আমাকে পূর্ণ হতে বলেছ সেভাবেই তুমি আমাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা পূর্ণ কর, এবং আমি যদি বিশ্বাসের সাথে কোন কিছু চাই তাহলে তোমার প্রতিজ্ঞাত বাক্যের মতই তুমি কাজ কর। আমি এই প্রার্থনা যীশুর নামে করছি। আমার বিশ্বাসের অভিব্যক্তি হিসেবে, এখন আমি আমার জীবনকে পরিচালনাদান করা এবং আমাকে পবিত্র আত্মা দিয়ে পূর্ণ করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাই।’’

আপনি যদি এই প্রার্থনা করে থাকেন, আত্মার নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্খা থাকে, তাহলে পবিত্র আত্মা আপনাকে এখনই পূর্ণতা দান করেছেন- এমনকি আপনার যখন মনে হবে না তখনও। আপনি যখন খ্রীষ্টের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন সেটা কি আপনার মনে আছে? আপনার হয়ত অনেকটা আবেগীয় অভিজ্ঞতা হয়েছে, অথবা আপনি হয়ত আমাকে পছন্দ করতে পারেন- খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার পর আমি তেমন কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করি নি। খ্রীষ্ট কোন অনুভূতির জন্য আসেন নি, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য সত্য। আত্মায় পূর্ণতাও ঠিক একই ধরনের।

তিনটি প্রশ্ন

আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে পবিত্র আত্মার পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আপনার মনে হয়ত অনেক প্রশ্ন রয়েছে যেগুলোর কোন উত্তর আপনি পান নি।

১. কেন অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানেরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হচ্ছে না?

যেদিন আমরা একসাথে শুরু করলাম সেদিন মাইক আসলে এই প্রশ্নটা করেছিল। অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানদের পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা না পাবার কারণ কি?

এক শব্দে বলা যায়, পাপ। আমরা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়াকেই বেছে নিই। এটা এই ধরণের অহংকারবোধের মত হতে পারে: সব কিছু আমারা চাওয়া-পাওয়ার মতই হবে। আমরা আমাদের অর্থ-কড়ির নিয়ন্ত্রণ ঈশ্বরের হাতে দিই না; আমরা আমাদের অর্থ-কড়ির জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি আর এখন এই অর্থ আমাদের নিজের। আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোতে ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রণ দিই না; কেন আমরা সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করব যেখানে শুধুমাত্র তারই দোষ? আমরা আমাদের ব্যক্তিগত নৈতিকতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে নিয়ন্ত্রণ দিই না; যে এটা কারও ভাববার বিষয় না কিন্তু এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়- এমনকি সেটা ঈশ্বরেরও না। এগুলো হল অহংকারমূলক কথা। শাস্ত্র বলে, ‘‘যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাদেরও তিনি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন,কিন্তু নম্রদের দয়া করেন।’’ (হিতোপদেশ ৩:৩৪)।

পাপ অন্য একটা রূপও নিতে পারে: ভয়। হিতোপদেশ বলে যে, ‘‘মানুষকে যে ভয় করে সেই ভয় তার পক্ষে ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়...’’ (হিতোপদেশ ২৯:২৫)। আপনি কি মানুষ কি ভাববে সেটার ভয়ে ঈশ্বর আপনাকে দিয়ে যা করাতে চাইছেন সেটা করতে ভয় পাচ্ছেন? আমি জানি যে এটা আমার জন্য চিন্তা করা সহজ: আমি এটা করতে পারব না। আমি যদি এটা করি তাহলে আমাকে বোকার মত মনে হবে। সম্ভবত ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এটা করাতে চাইবেন না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই তিনি তা চান!

হিতোপদেশের এই শেষ পদটুকুর শেষ অর্ধেক অংশ এই শিক্ষা দেয় যে: ‘‘কিন্তু যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে সে নিরাপদে থাকে।’’ ঈশ্বরের সমর্থনের চাইতে মানুষের সমর্থনকে গুরুত্ব দেওয়াটা সহজ, কিন্তু আমরা কি সত্যিকারভাবে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই না? আমাদের জীবনযাপন অন্য লোকদের থেকে আলাদা হবে। কিন্তু এর জন্য মূল্য দিতে হবে।

২. পাপের সাথে সংগ্রাম করা অবস্থায় আমি কি পবিত্র আত্মা দ্বারা পূর্ণ হতে পারি?

আমি মনে করি যে, ‘‘পাপের সাথে সংগ্রাম করা’’ দ্বারা আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন এটা সেটার উপর নির্ভর করে! যদি আপনি অনবরতভাবে পাপ করতেই থাকেন, তাহলে পবিত্র আত্মা আপনার জীবনকে পরিচালনা করবেন না বা পূর্ণতা দান করবেন না। কিন্তু যদি আপনি এটা জিজ্ঞেস করেন যে,‘‘পবিত্র আত্মার পূর্ণতা লাভের অভিজ্ঞতার পরও কি আমি তখন পাপ করব?’’- তাহলে এখানে উত্তরটা হবে একটি জোরালো হ্যাঁ।

আপনি সারাদিনে হয়ত নিজেকে বেশ কয়েকবার পাপ করতে এবং পাপ স্বীকার করতে দেখে থাকবেন। এটা কিন্তু আত্মিক দুর্বলতা নয়; এটা একটি প্রমাণ যে আপনি আত্মিকভাবে জীবনযাপন করছেন এবং শ্বাস নিচ্ছেন! পাপ সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং এটাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাকে ‘‘আত্মিক শ্বাস ‘’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

আত্মিক শ্বাস এর সাথে ‘‘প্রশ্বাস’’ও জড়িত— যেটা হল ঈশ্বরকে তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়ে আপনাকে পূর্ণ করার জন্য, তাঁকে আবারও আপনার জীবনের কর্তা হিসেবে আসার জন্য অনুরোধ করা। মনে রাখবেন, আপনি যখন পাপ করেন তখন তিনি আপনাকে ছেড়ে যান না। কিন্তু আপনি তাঁর পরিচালনায় চলেন নি, আর এখন আপনি আবারও তাঁর নির্দেশনায় চলা শুরু করেছেন। আপনি তাঁকে বিশ্বাস করতে শিখছেন, যার জন্য সময়ের প্রয়োজন। আপনি যখন পাপে পতিত হন তখন নিরুৎসাহিত হবেন না: পাপ কাটিয়ে উঠতে শিখুন।

আমাদের তিনটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় জন গতবছরে শিখে গেছ কিভাবে হাঁটতে হয়। একটু সময় লেগেছে, সে তার প্রথম জন্মদিনে দাঁড়াতে পারেনি, তার শোয়ার স্থানে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং কনুইয়ের উপর হামাগুড়ি দিয়েছে। তার প্রথম পদক্ষেপগুলো ছিল পরীক্ষামূলক এবং টলমলে। সে কাদামাটিতে, কফির টেবিলে এবং কাপড়ের ঝুড়িতে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে কখনই হার মেনে নেয় নি। অবশেষে তার পদক্ষেপগুলো শক্তিশালী, এবং আত্মবিশ্বাসে পরিবর্তিত হতে লাগল। সে এখনও মাঝে মধ্যে পড়ে যায়(এবং তার বাবা-মা ও!) , কিন্তু সে তা কাটিয়ে ওঠে।

আমরা কখনই পাপ থেকে রেহাই পাই না; নিষ্পাপতা শুধুমাত্র স্বর্গের জন্যই বরাদ্দকৃত। যখন আমরা ঈশ্বরকে জানার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাব, তখন আমরা জীবনকে তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাবার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাব, এবং কিছু ক্ষেত্রে নিষ্পাপ থাকব। আমরা প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও শিখে যাব। কিন্তু তখনও এমন কিছু পরিস্থিতি আসবে যখন আমরা পাপ করব আর তখন আমরা আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনের প্রথম বর্ষেই থাকি বা সত্তরতম বর্ষেই থাকি না কেন, আমাদের আত্মিকভাবে শ্বাস নেবার প্রয়োজন হবেই।

৩. কেমন হবে যদি আমার জীবন এখনও পরিবর্তিত না হয়?

আপনার ক্ষেত্রে কি এমন ঘটেছে যে আপনার আত্নিক বৃদ্ধির স্তর হয়ত ঈশ্বর ঠিক যেভাবে চান সেভাবেই আছে? আমরা দুই ধরনের খ্রীষ্টিয়ানদেরকে দেখেছি, প্রথমটি হল জাগতিক এবং দ্বিতীয়টি হল আত্মিক। কিন্তু খ্রীষ্টিয়ানদের তৃতীয় একটি ধরণ রয়েছে, সেটা হল: নতুন খ্রীষ্টিয়ান। আপনার কি মনে আছে যে পৌল সেই করিন্থীয়দেরকে কি বলেছিলেন? ‘‘ভাইয়েরা, যারা আত্মিক সেই রকম লোকদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, আমি তোমাদের কাছে সেইভাবে কথা বলতে পারি নি, বরং যারা পাপ-স্বভাবের অধীনে আছে তাদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, সেইভাবেই তোমাদের কাছে কথা বলেছিলাম। খ্রীষ্টিয় জীবনে তোমরা তো একেবারে শিশুর মত।’’

এর কয়েক বছর আগে, পৌল করিন্থীয় মন্ডলীর অনেককে খ্রীষ্টের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি তাদের কাছ থেকে পরিপক্কতা, আত্নিক বিশ্বাসী হওয়া এমনটা আশা করেন নি। কিন্তু একজন খ্রীষ্টিয়ানের পক্ষে আত্নিক বৃদ্ধির স্বাভাবিক নকশা অনুসরণ করার পরিবর্তে, করিন্থীয় মন্ডলীর লোকেরা জাগতিক বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। আপনি যদি কয়েক মাস ধরে একজন বিশ্বাসী হন, তাহলে আপনি এখনও একজন ‘‘শিশুর’’ মত খ্রীষ্টিয়ান, শুধুমাত্র একজন নবীন।

প্রত্যেক সেপ্টেম্বর মাসে যখন আমরা মিড ওয়েস্টে থাকতাম তখন আমরা পরিবারসহ মিশিগানের তিনটি নদীতে স্টোভারের বাগানে দিকে রওনা হতাম। আমরা জানতাম যে সারিবদ্ধ আপেল গাছগুলো আমাদেরকে স্বাগত জানাবে। আমরা ম্যাকিনটোসেস, ওয়াইনস্যাপস এবং রোমস দিয়ে শস্যদানার ঝুড়িগুলি ভরেছি।

ফলের বাগানের পেছনে সারিবদ্ধ গাছগুলো আপেল দিয়ে ভরা ছিল না। এমনকি সেই গাছগুলোতে কোন ফলই ছিল না। কিন্তু তারা মরে যায় নি; তারা কেবল নতুন গাছ ছিল। কয়েকটি গাছ তো পাঁচ ফিট লম্বাও হয় নি। কিন্তু সে সময়ে পুরোনো গাছগুলো পরিপক্ক হয়ে বেড়ে উঠেছিল এবং আপেলের ভারে নিচু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেই নতুন গাছগুলো শুধুমাত্র বৃদ্ধি পেতেই ব্যস্ত ছিল।

আজ যদি আপনি খ্রীষ্টের বাধ্য হয়ে চলেন এবং আপনাকে পরিবর্তন করার জন্য তাঁর ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখেন, তাহলে ঈশ্বর আপনার কাছ থেকে যা চাইছেন আপনি সেই পথেই আছেন। আপনার যদি মনে হয় আপনার মধ্যে ‘‘ফলের’’ ঘাটতি আছে তাহলে নিজেকে মানসিক যন্ত্রণা দেবেন না। আমি কখনই ঐ নতুন গাছগুলোকে পুরোনো গাছগুলোর সাথে তুলনা করতে দেখি নি। বৃদ্ধি হল একটি প্রক্রিয়া, আর এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি অংশই অতি গুরুত্বপূর্ণ।

আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমি খ্রীষ্টের বাধ্য হয়ে চলছি এবং সেজন্য আমি নিজেকে অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানদের সাথে তুলনা করার চিন্তা করব না, আমি খ্রীষ্টিয়ান হওয়াটাকে উপভোগ করি।

বিল ব্রাইটের একটি প্রার্থনা থেকে নেয়া, ‘‘হ্যাভ ইউ মেইড দ্যা ওয়ানডারফুল ডিসকাভারি অফ দ্যা স্পিরিট ফিলড লাইফ?’’ (স্যান বার্নারডিনো, সিএ: ক্যাম্পাস ক্রুসেড ফল ক্রাইস্ট,১৯৯৬), পি ১২.