×
অনুসন্ধানें

বিশ্বাসের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য

আমরা প্রতিদিনই বিশ্বাসের চর্চা করে থাকি। প্রতিটি ধর্মবিশ্বাস বা মূল্যবোধ বিশ্বাসের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। বিশ্বাস হল সমস্ত জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন আপনি এমন একজন ডাক্তারের কাছে গেলেন যার নাম আপনি উচ্চারণ করতে পারছেন না এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রমাণ আপনার কাছে নেই। তিনি আপনাকে এমন একটি ঔষাধির ব্যবস্থাপত্র দিলেন যেটা আপনি পড়তে পারছেন না। তখন আপনি সেটাকে এমন একজন ওষুধের ফার্মাসিস্টের কাছে নিয়ে গেলেন যার সাথে আপনার কখনও ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ হয় নি, আর তিনি আপনাকে একটি জটিল রাসায়নিক যৌগ দিয়েছেন যেটা আপনি বুঝতেও পারছেন না। এরপর আপনি বাড়িতে গেলেন এবং বোতলের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি ওষুধের বড়ি নিলেন। এই ক্ষেত্রে আপনি সারা সময়জুড়েই আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেছেন। খ্রীষ্টিয়ান জীবনেরও কেন্দ্রবিন্দু হল বিশ্বাস। বাইবেলে বিশ্বাস শব্দটি ২৩২ বার আছে।

বিশ্বাস কি?

আমি মনে করি, প্রথমে আপনাকে কোনটা বিশ্বাস নয় সেটা আগে বলা দরকার।

  • বিশ্বাস কোন আবেগ নয়, বি.দ্র. ঈশ্বর সম্বন্ধে ভাল অনুভব করা।
  • বিশ্বাস মানে এই নয় যে বিষয়গুলো থাকা সত্ত্বেও অন্ধকারে লাফানো।
  • বিশ্বাস এমন কোন সার্বজনীন শক্তি নয় যেটা আপনি জীবনে যা চান সেটা করতে আপনাকে পরিচালনাদান করবে। (বি.দ্র. স্টার ওয়ার্সের সেই শক্তিটি নয়, লূক শক্তির ব্যবহার কর!)

দূর্ভাগ্যবশত, আজও কিছু গীর্জায় বিশ্বাসের এই ধারণাগুলোকে শেখানো হয়ে থাকে।

হ্যান্ক হানগ্রাফ তাঁর খ্রীষ্টিয়ানিটি ইন ক্রাইসেস বইটিতে ল্যারি এবং লাকি পার্কারের গল্প বলেছেন যারা তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছেলেকে ইনসুলিন দিতে দেয় নি, কারণ তাদেরকে বলা হয়েছিল যে যদি তারা শুধুমাত্র বিশ্বাস করে (যদি তারা শুধু সেই শক্তির ব্যবহার করে) তাহলে তাদের ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে। দু:খজনকভাবে, তাদের ছেলে ডায়বেটিক কোমায় চলে যায় এবং পরবর্তীতে মারা যায়। তারা একটি শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করার পরিবর্তে পুনরুত্থানের অনুষ্ঠান করল এটা বিশ্বাস করে যে তাদের যদি যথেষ্ট বিশ্বাস থাকে অর্থাৎ যদি তারা ঠিক কথা বলে এবং কোন সন্দেহ না করে শুধুমাত্র বিশ্বাস করে, তবে তাদের বিশ্বাসের সেই শক্তি তাদের ছেলেকে মৃত্যু থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। পরবর্তীতে ল্যারি এবং লাকি পার্কারকে খুন এবং শিশু নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। কেন? কারণ বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা ছিল।

নতুন নিয়মের সুসমাচার সমূহ (মথি, মার্ক, লুক, যোহন) দেখায় যে শিষ্যেরা প্রায়ই বিশ্বাস নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। যাইহোক, তারা যীশুকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। লূক লিখিত সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ে, আপনি দেখবেন শিষ্যেরা যীশুকে তাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়া জন্য অনুরোধ করছে। আর তাদের প্রতি যীশুর সাড়াদানটি ছিল এই:

নতুন নিয়মের সুসমাচার সমূহ (মথি, মার্ক, লুক, যোহন) দেখায় যে শিষ্যেরা প্রায়ই বিশ্বাস নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। যাইহোক, তারা যীশুকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। লূক লিখিত সুসমাচারের ১৭ অধ্যায়ে, আপনি দেখবেন শিষ্যেরা যীশুকে তাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়া জন্য অনুরোধ করছে। আর তাদের প্রতি যীশুর সাড়াদানটি ছিল এই:

‘‘একটা সর্ষে-দানার মতও যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে তবে তোমরা এই তুঁত গাছটাকে বলতে পারবে, ‘শিকড় সুদ্ধ উঠে গিয়ে নিজেকে সাগরে পুঁতে রাখ’; তাতে সেই গাছটি তোমাদের কথা শুনবে।’’ যীশুর সাড়াদানটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। লক্ষ্য করুন, আমরা গীর্জায় যেসকল কথা শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি সেটা যীশু বলেন নি। যীশু বলেন নি যে,‘‘তোমাদেরকে আরও কঠোর চেষ্টা করতে হবে।’’ যীশু এটাও বলেন নি যে,‘‘তোমাদের শুধুমাত্র বিশ্বাস করতে হবে।’’ যীশুর সাড়াদানটি বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে তুলে ধরে। সর্ষে-দানা হল সকল দানার মধ্যে সবচাইতে ছোট। যীশু এই সত্যটিকে ব্যবহার করে এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে আপনার বিশ্বাসের আকার কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে বিশ্বাসের শক্তি এর নির্ভরযোগ্যতার উপর নির্ভর করে, আপনি যতই আত্নবিশ্বাসী হোন না কেন সেটার উপর তা নির্ভর করে না।

এটা সত্য যে বিশ্বাসের শক্তি এর ভেতরের নির্ভরযোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। যাহোক,

কোন বস্তুর এক জায়গায় বিশ্বাসের মাত্রা সরাসরি বস্তুর জ্ঞানের সাথে সমানুপাতিক।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একজন ব্যক্তি বিমানে চড়তে ভয় পান। যখন তিনি প্রথমবারের মত বিমানবন্দরে আসলেন, তখন তিনি কয়েন দ্বারা পরিচালিত পলিসি মেশিন থেকে বীমা কিনলেন। তিনি বিমান উড়বার বিশ মিনিট আগেই তার সিট বেল্ট বেঁধে রেখেছেন এবং তিনি ‘‘জরুরী নির্দশাবলী’’এর রুটিন বেশ গুরুত্বের সাথে শুনছেন। বিমানটি যে তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবে সে বিষয়ে তার কোন আস্থা নেই। কিন্তু যখন যাত্রা শুরু হল, যাত্রীটি পরিবর্তিত হতে শুরু করলেন। প্রথমে তিনি তার সিটবেল্ট খুললেন, তারপর দুপুরের খাবার খেলেন, আর এর পর পরই তিনি তার পাশের লোকটির সাথে কথা বলা এবং রসিকতা করা শুরু করলেন। এমন পরিবর্তন কেন হল? কি ঘটল? ৩৬,০০০ ফিট উপরে কি বেশি বিশ্বাস আছে? অবশ্যই না। তিনি বিশ্বাসের সেই বস্তু. বিমান, সম্বন্ধে যতই জানতে থাকলেন ততই বস্তুটির প্রতি তার বিশ্বাসের অনুশীলন হল।

খ্রীষ্টিয় জীবনটাও ঠিক এমন। আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে যতই জানতে পারি, ততই তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। আপনার অনুভূতির চাইতে ঈশ্বরের সত্য বাক্য অনুসারে বাঁচতে শিখুন। বাইবেল পর্যবেক্ষণ করে সময় কাটান, ঈশ্বর কে সেটা আপনাকে দেখানোর জন্য তাকে অনুরোধ করুন। আপনার শুরু করার জন্য অনেকগুলো ভাল অংশ রয়েছে। ঈশ্বর কে সেটা জানার জন্য গীতসংহিতা ১৪৫, ১৪৬ এবং ১৪৭ হল তিনটি চমৎকার অধ্যায়। ঈশ্বরকে অনুরোধ করুন যাতে তিনি নিজেকে আপনার কাছে আরও বেশি করে প্রকাশ করেনে এবং বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন যে তাঁর উপর আপনার বিশ্বাসকে তিনি ঠিক কি ভাবে চান। নিম্নোক্ত পরিস্থিতিগুলোতে আপনি তাকে এভাবে অনুরোধ করুন,‘‘এই পরিস্থিতিতে তোমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কারণে তোমার সম্পর্কে কোনটা জানা আমার জন্য সহায়ক হবে? ’’ বাইবেলের কাছে যান এবং ঈশ্বরের একজন শিক্ষার্থী হোন এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন।

ডি.এল. মুডি একবার বলেছিলেন,‘‘আমাকে বিশ্বাস দেওয়ার জন্য প্রতিদিনই আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম। তারপর একদিন আমি রোমীয় ১০:১৭ পড়লাম যেখানে লেখা আছে,‘ ঈশ্বরের বাক্য শুনবার ফলেই বিশ্বাস আসে, আর খ্রীষ্টের বিষয় প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই বাক্য শুনতে পাওয়া যায়।’ তাই আমি আমার বাইবেল পড়া শুরু করলাম, এবং তখন থেকেই আমার ভেতরের বিশ্বাস বৃদ্ধি পেতে শুরু করল।’’