×
অনুসন্ধানें

আমাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা

আমাদের মধ্যে অনেকেই এটা ভাবেন যে,‘‘যীশু যদি এই পৃথিবীতে এসে থাকেন, আর আমরা যদি তাঁকে দেখতে পেতাম, তাহলে আমরা তাঁকে যেকোন জায়গাতেই অনুসরণ করতাম।’’ কিন্তু যিহিষ্কেল ৩৬:২৬-২৭ পদে সদাপ্রভু বলেন,‘‘ তোমাদের ভিতরে আমি আমার আত্মা স্থাপন করব এবং এমন করব যাতে তোমরা আমার সব নিয়ম পালন কর।’’ ‘‘ভিতরে’’ শব্দটির মধ্যে কিছু একটা আছে। ‘‘আমি তোমাদের ভিতরে আমার আত্মা স্থাপন করব।’’ এমন সময় ছিল যখন আমাকে মনে করিয়ে দেয়া লাগত যে আমার ভেতর পবিত্র আত্মা আছেন। আমার মনে আছে যে, আমি এই বিষয়টি পড়েছিলাম এবং কয়েকদিন ধরে হাঁটা-চলার সময়েও আমি এই চিন্তা করতাম,‘‘তাঁর আত্মা আমার ভেতর রয়েছে!’’ খ্রীষ্ট পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমার ভেতরেই আছেন যেমনটা তিনি তাঁর শিষ্যদের সাথে ছিলেন। এটা উপলব্ধি করা কতটা চমৎকার যে তাঁর আত্মা আমাদের ভেতরে আছে এবং প্রায়ই আমরা তাঁর দিকে একটুও মনোযোগ দিই না।

যেখানে পবিত্র আত্মা থাকেন

১ম করিন্থীয় ৩:১৬ বলে যে,‘‘ তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের থাকবার ঘর আর ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন?’’ এন্ড্রু মাররি, তার দ্যা স্পিরিট অফ খ্রাইস্ট বইটিতে এই বিষয়ে যেভাবে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন সেটা আমার জন্য অনেক সাহায্য করেছে। তিনি বলেছিলেন যে যিহূদী মন্দিরের তিনটি ভাগ ছিল।: বাইরের অংশ, ভেতরের অংশ, এবং মহাপবিত্র স্থান।

আমাদের শরীর কীভাবে বাইরের অংশের মত সেই বিষয়ে মারি বর্ণনা করেছেন। ভেতরের অংশ হল আমাদের মন, আকাঙ্খা এবং আমাদের আবেগ। কিন্তু আমাদের ভেতরে মহাপবিত্র স্থান রয়েছে যেখানে ঈশ্বরের আত্মা বাস করেন। পবিত্র আত্মা আপনার ভেতরে আছেন। এই অধ্যায়ের ১৭ পদ এ বলা হয়েছে,‘‘ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, এবং আপনি এই মন্দিরেই রয়েছেন।’’ এটি আপনার নিজের চিত্র যা আপনাকে জানতে সাহায্য করবে যে মহাপবিত্রস্থান আপনার এবং আমার মধ্যে আছে।

কীভাবে আমরা নিজেদের মন্দিরগুলোকে বিশুদ্ধ রাখি? একবার যখন আমরা খ্রীষ্টকে গ্রহণ করি তখন খ্রীষ্টের রক্তই আমাদেরকে বিশুদ্ধ করে। তারপর কীভাবে আমরা আমাদের মন্দিরগুলোকে বিশুদ্ধকরণ করি? বিশ্বাসের মাধ্যমে। ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস এনেই আমরা তা করি।

১ম যোহন ১:৯ পদটিকে আমি ‘‘একজন খ্রীষ্টিয়ানের সাবান” বলতে পছন্দ করি। এখানে বলা হয়েছে যে,‘‘ যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং তিনি কখনও অন্যায় করেন না।’’

শেষবার যখন আপনার হাতদুটো অনেক নোংরা ছিল তখন হাত ধোয়ার সময় আপনি কি বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্ন করেছেন যে,‘‘আমার হাতের ময়লাগুলো কোথায় গেল, এটা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত?’’ না, আপনি তা করেন নি। আপনি বিশ্বাস করেছেন যে আপনার হাতের ময়লা নিচে গিয়ে নর্দমায় পড়েছে। আপনি এটা নিয়ে কখনও চিন্তা করেন নি। আমাদেরকে এটাই করতে হবে। যদি আমরা আমাদের পাপস্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত; তিনি আমাদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং আমাদেরকে অধার্মিকতা থেকে পরিষ্কৃত করবেন। আমরা যদি তা দেখতে না পাই বা নাও অনুভব করতে পারি তবুও আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে।

পবিত্র আত্মা আমাদেরকে খ্রীষ্টের দিকে নির্দেশ করে। তিনি সর্বদাই আমাদেরকে ক্ষমা, ক্রুশ এবং খ্রীষ্টের রক্তের দিকে নিয়ে যান। তিনি আমাদেরকে কোন আত্ম-দোষারোপের দিকে নিয়ে যান না। কেন? কারণ রোমীয় ৮:১ বলে যে,‘‘ যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।’’

কিন্তু শয়তান কি করে? সে আপনাকে সেই শান্তি থেকে দূরে সরিয়ে দেয় যেটা ঈশ্বর আপনাকে দিয়ে চান। শয়তান আপনাকে পেছনের দিকে ফেরাতে এবং আপনার সবচেয়ে খারাপ পাপটির কথা মনে করিয়ে দিতে চায়। আপনি সেসব বিষয়গুলো সম্বন্ধে ভাবেন এবং সেগুলো আপনার মনে ভিডিওর মত চলতে থাকে। আমাদেরকে সেই পাপগুলোকে নিয়ে ক্রশের কাছে আসতে হবে এবং বলতে হবে,‘‘প্রভু যীশু, এগুলো প্রমাণ দেয় যে আমার একজন ত্রাণকর্তার প্রয়োজন। প্রভু, তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে যীশু খ্রীষ্টের রক্ত আমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করেছে।’’ আপনার পাপগুলো ক্রশের মধ্যে এবং খ্রীষ্টের রক্তের মধ্য দিয়ে গিয়েছে এমনটা ভাবুন, এবং আপনি ঈশ্বরের দেয়া সেই শান্তি খুঁজে পাবেন। পুরোনো পাপগুলোকে ফিরে দেখবেন না। ঈশ্বরের ক্ষমাতে বিশ্বাস করুন।

পবিত্র আত্মা আমাদের কাছে কথা বলছেন

এখন বর্তমানের এই পাপগুলো নিয়ে কি করা যায় যেগুলোকে হয়ত ঈশ্বর আপনাকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন?

যেভাবে প্রভু আমার কাছে পৌঁছান সেগুলো অন্য উপায়গুলো থেকে ভিন্ন, আর সেই উপায়টি হল আমার সম্পর্কগুলোর মাধ্যমে। আমার জীবনে এমন একটি সম্পর্ক ছিল যার কারণে বছরের পর বছর ধরে আমি জ্বালাতন সহ্য করেছি। এই ব্যক্তিকে নিয়ে এটা ভেবে আমার কঠিন সময় গিয়েছে যে, ‘‘যদি আপনি স্বর্গে যান তাহলে আমি সেখানে যেতে চাই না।’’ আমি সেই ব্যক্তিটির দিকে আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করছিলাম। আমি জটিল স্বভাবসম্পন্ন ছিলাম। আমার অন্যকে বিচার করার মানসিকতা ছিল। আমি অন্যের ভুল খুঁজে বেড়াতাম। তাদেরকে আমার ভাল কিছু বলার ছিল না। আর সবসময়ই, আমি নিজেকে সৎ দাবি করতে চাইতাম।

তারপর একদিন প্রভু আমাকে লূক ১৮:৯ এর দিকে নির্দেশ করলেন,‘‘ যারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে অন্যদের তুচ্ছ করত তাদের শিক্ষা দেবার জন্য যীশু এই কথা বললেন:’’ আমি বুঝতে পালাম যে অন্য ব্যক্তিকে আমি অবজ্ঞার চোখ দেখছি। যীশু এই উপমা বলেছিলেন:

‘‘দু’জন লোক প্রার্থনা করবার জন্য উপাসনা-ঘরে গেলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরীশী ও অন্যজন কর্-আদায়কারী। সেই ফরীশী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই প্রার্থনা করলেন, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে, আমি অন্য লোকদের মত ঠগ, অসৎ ও ব্যভিচারী নই, এমন কি, ঐ কর্-আদায়কারীর মতও নই। আমি সপ্তায় দু’বার উপবাস করি এবং আমার সমস্ত আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ তোমাকে দিই।’সেই সময় সেই কর্-আদায়কারী কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশের দিকে তাকাবারও তার সাহস হল না; সে বুক চাপ্ড়ে বলল, ‘হে ঈশ্বর! আমি পাপী; আমার প্রতি করুণা কর।’’

যীশু এই গল্পটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করলেন,‘‘ আমি তোমাদের বলছি, সেই কর্-আদায়কারীকে (যে বলছিল হে ঈশ্বর; আমি পাপী, আমার প্রতি করুণা কর।) ঈশ্বর নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন আর সে বাড়ী ফিরে গেল। কিন্তু সেই ফরীশীকে তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন না। যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে এবং যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।’’

যখন আমি এটা পড়লাম তখন আমি বললাম,‘‘ও প্রভু, আমি তো সেই ফরীশীদের মতই আচরণ করছি। আমি এটা ঘৃণা করি। আমি এই লোকটিকে ঘৃণার চোখে দেখছি।’’ আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে আমার নিজের অন্তরের দিকে দেখতে হবে। যখন আমি আমার অন্তরের দিকে তাকালাম তখন সেখানে আমি হিংসা, ভালবাসার ঘাটতি, অহংকার, রাগ, অন্যকে বিচার করা এগুলো দেখতে পেলাম। তারপর আমি গালাতীয় ৫:১৬-২৩ দেখলাম। ‘‘আমি যা বলছি তা এই-তোমরা পবিত্র আত্মার অধীনে চলাফেরা কর। তা করলে তোমরা পাপ-স্বভাবের ইচ্ছা পূর্ণ করবে...পাপ-স্বভাবের কাজগুলো হল-ব্যভিচার, অশুচিতা, লমপটতা,প্রতিমা-পূজা, যাদুবিদ্যা, শত্রুুতা, ঝগড়া, লোভ, রাগ, স্বার্থপরতা, অমিল, দলাদলি,হিংসা, মাতলামি, হৈ- হল্লা করে মদ খাওয়া, আর এই রকম আরও অনেক কিছু।...কিন্তু পবিত্র আত্মার ফল হল-ভালবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহ্যগুণ, দয়ার স্বভাব, ভাল স্বভাব, বিশ্বস্ততা,নম্রতা ও নিজেকে দমন। এই সবের বিরুদ্ধে কোন আইন নেই।‘’

মাঝে মাঝে আমরা আমাদের পাপের তালিকার দিকে তাকাই এবং বলি যে,‘‘কই আমি তো নিজেকে এই তালিকার মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি না।’’ কিন্তু আপনি কি জানেন আমরা কোনটি করতে ব্যর্থ হয়েছি? আমরা পবিত্র আত্মার ফলের তালিকার দিকে তাকিয়ে ‘‘আমি কতটা ভালবাসতে পেরেছি? আমার মধ্যে কতটা দয়ার স্বভাব আছে? আমি কতটা বিশ্বস্ত হতে পেরেছি? আমি কতটা নম্র হতে পেরেছি?’’ এগুলো বলতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা নিজেদেরকে পবিত্র আত্মার ফলের তালিকার সাথে তুলনা না করে পাপের তালিকার সাথে তুলনা করছি।

এন্ড্রু মারি বলেছেন,‘‘এমনটা কেন হয় যে আমরা খ্রীষ্টিয়ানরা কেন পবিত্র এবং মন্দ লোকদেরকেই খুঁজে পাই?’’ তিনি আরও বলেন,‘‘কারণ তারা আত্মার ভালবাসা সম্পর্কে কিছু জানে না। শুধুমাত্র পবিত্র আত্মাই তাঁর ভালবাসা তৈরী করতে পারেন।’’

যে লোকটি আমাকে আঘাত করেছিল তার সম্পর্কে চিন্তা করার সময় আমার ১ম পিতর ৩:৮-৯ পদটি মনে পড়ে যে,‘‘শেষে বলি, তোমাদের সকলের মন যেন একই রকম হয়। তোমরা একে অন্যের দু:খে দু:খ বোধ কর, ভাইয়ের মত ভালবাসার ভাব রাখ এবং দয়ালু ও নম্র হও। অন্যায়ের বদলে কারও উপর অন্যায় কোরো না বা কেউ গালাগালি দিলে তাকে ফিরে গালাগালি দিয়ো না,’’ এখানে বলা হয়েছে যে,‘‘বরং তাদের জন্য আশীর্বাদ চেয়ো’ কারণ আশীর্বাদ পাবার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন।’’

যখন আমি নিজের হৃদয়ের দিকে তাকালাম এবং স্বীকার করলাম যে আমি ফরীশীদের মত কাজ করেছি আর তখন আমি প্রার্থনা করলাম,‘‘প্রভু, এই পাপীর প্রতি দয়া কর। প্রভু, কীভাবে এই ব্যক্তিকে আশীর্বাদ করতে হবে তা কি তুমি আমাকে দয়া করে দেখিয়ে দেবে?’’ সেই সময়ে আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম, এবং একটি বইয়ের দোকানে আমি একটি দামি বই দেখলাম যেটা সে খুবই পছন্দ করবে। পরের বার আমি আমেরিকাতে ফিরে এসে, তাকে সেই বইটি দিলাম। আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না যে, বইটা পেয়ে সে কতটা গভীরভাবে স্পর্শিত হয়েছিলো। এটা তার কাছে পুরো পৃথিবীটাকে পাবার মত বলে মনে হয়েছিল আর আমি মনে করি যে ঈশ্বর এটাকে শক্তিশালী উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

আমাদের কোন কোন জায়গায় আমরা খ্রীষ্টের মত নেই সে জায়গাগুলোকে পবিত্র আত্মা সবসময়ই বিশ্বস্ত উপায়ে আমাদেরকে দেখিয়ে দেন। আমি যেখানে খ্রীষ্টের মত ছিলাম না সেই জায়গাটি তিনি আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্য পড়ি এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করবে সে বিষয়ে আমাদেরকে পরিচালনা দানের জন্য পবিত্র আত্মার কাছে অনুরোধ করি, তখন তিনি আমাদের জীবনে আত্মার ফল দেবেন: ‘‘ভালবাসা, আনন্দ, শান্তি, ধৈর্য্য, সদয়তা, ভাল স্বভাব, নম্রতা এবং নিজেকে দমন।’’

যীশু বলেছেন,‘‘ পিতা যেমন আমাকে ভালবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালবেসেছি। আমার ভালবাসার মধ্যে থাক...এই সব কথা আমি তোমাদের বললাম যেন আমার আনন্দ তোমাদের অন্তরে থাকে ও তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়।’’ (যোহন ১৫:৯,১১)