×
অনুসন্ধানें

আপনি যখন পতিত হন

পাপ নিয়ে আপনি কি করেন?

আই আর এস অজ্ঞাত একজনের কাছ থেকে এই চিঠিটি পেয়েছে:

মহোদয়গণ:

ভেতরে আপনারা একজন হিসাবরক্ষকের ১৫০ ডলারের একটি চেক পাবেন। গতবছর আমি আমার কর ফেরৎ দেওয়াতে ফাঁকি দিয়েছি আর তারপর থেকে আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না। এরপরও যদি আমার ঘুমাতে সমস্যা হয় আমি আপনাকে বাকী টাকা দিয়ে দেব।

আমাদের প্রত্যেকেই নিজেদের করা পাপ কাজের ক্ষমা পেতে চাই। এখানে প্রশ্ন হল, কোথা থেকে এই ক্ষমা আসবে?

একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে, আপনার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আপনি হয়ত বাইবেলের এই বিষয়টি বিশ্বাসও করেন। কিন্তু কীভাবে এর প্রতি সাড়াদান করা যায়? অনেক বিশ্বাসীদের পরামর্শদাতা একজন বন্ধু মন্তব্য করেছেন: ‘‘কিছু খ্রীষ্টিয়ানেরা আসলে এটা বিশ্বাস করেন না যে তারা পাপ করেছেন; আর অন্যরা মনে করেন যে তাদেরকে ক্ষমা করা হয় নি।’’

আমি আপনাদেরকে আপনার পাপ এবং খ্রীষ্টের ভালবাসা উভয়ের সত্যতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে চাই।

পাপ কি

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে একবার বলেছিলেন যে যদি কোনকিছু নৈতিক হয়ে থাকে, তাহলে এরপর আপনি ভাল বোধ করেন; যদি কোন কিছু অনৈতিক হয়ে থাকে, এরপর আপনার খারাপ লাগে। এটি হল পাপের একটি জনপ্রিয় দৃষ্টিকোণ- অনেকেই এর মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করেছেন। কিন্তু এটা বাইবেলীয় কোন দৃষ্টিকোণ নয়। বাইবেলীয়ভাবে, পাপ হল এমন একটি আচরণ যেটি ঈশ্বরের পথে না চলে নিজের ইচ্ছামত চলাকে বোঝায়।

পাপ ঈশ্বরের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? তিনি এটা সহ্য করতে পারেন না। ‘‘তুমি এত খাঁটি যে, তুমি মন্দের দিকে তাকাতে পার না এবং অন্যায় সহ্য করতে পার না।’’ (হবক্কূক ১:১৩) ‘‘ঈশ্বর আলো; তাঁর মধ্যে অন্ধকার বলে কিছুই নেই।’’ (১ম যোহন ১:৫)

এটাকে হয়ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হতে পারে। যীশু কি আপনার সমস্ত পাপের জন্য মূল্য দেন নি? যেখানে ঈশ্বর আপনাকে ভালবাসেন এবং আপনার জীবনের জন্য দারুণ এক পরিকল্পনা করে রেখেছেন সেখানে আপনি কেন এটা নিয়ে এত চিন্তা করছেন? হয়ত আপনার জীবনে পাপকে ভুল, নিছকই ভুল হিসেবে দেখতে পারেন।

ঈশ্বর কখনই এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন না। একটিমাত্র পাপের কারণে আদম ও হবা এদোন বাগান থেকে বিতাড়িত হলেন। পাপের কারণে ঈশ্বর নোহের সময়কালে পৃথিবীর লোকদের উপরে জলপ্লাবন নিয়ে এসেছিলেন। তিনি সদোম এবং ঘমোরার লোকদের অনৈতিকতার জন্য সেই শহরের উপরে আগুনের বর্ষণ নামিয়েছিলেন। পাপের কারণে ইস্রায়েলের সত্যিকার সন্তানদেরকে চল্লিশ বছর মরুপ্রান্তরে কাটাতে হয়েছে।

ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করেন। তবুও আমাদের কাছে পাপ ভালই মনে হয়, আর আমরা এটাই করি। আদম এবং হবার মতই, আমরা চিন্তা করি যে আমরা মন্দকে চিনতে পারব কিন্তু এরপরও আমরা একে কাটিয়ে উঠতে পারি না। কিন্তু আমরা ঈশ্বরের মত হয়ে যাই না।

ঈশ্বর মন্দের উপস্থিতি সম্পর্কে জানেন, কিন্তু ঈশ্বর মন্দ নন, আর তিনি মন্দের কাছে নতিস্বীকার করেন না। অন্যদিকে, আমরা যারা এর প্রতি আকর্ষিত হই, তারাই এর কাছে নতিস্বীকার করে নিই।

দোষী দল

যখনই আপনি পাপ করেন, তখন আপনার ভেতরে থাকা ঈশ্বরের আত্মা দু:খ পায়। মাঝে মাঝে তিনি আপনাকে আপনাকে দোষী মনে করাতে পারেন। পাপ করার সময়, আপনি তাৎক্ষণিকভাবে আপনার জন্য প্রভুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারীভাবে বাঁচার বিষয়টিকে আপনি বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু এই বিষয়টির জন্য ঈশ্বর আপনাকে ঘৃণা করেন না। তিনি এখনও আপনাকে ভালবাসেন। কিন্তু এটা তাকে দু:খ দেয়: ‘‘তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দিয়ো না, যাঁকে দিয়ে ঈশ্বর মুক্তি পাবার দিন পর্যন্ত তোমাদের সীলমোহর করে রেখেছেন।’’ (ইফিষীয় ৪:৩০) কীভাবে পাপ আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করে সেটা বোঝার জন্য ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্ক এবং সহভাগিতার পার্থক্যের দিকটি দেখুন।

ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্ক ঈশ্বরের সাথে আপনার সহভাগিতা
খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার পর থেকেই শুরু হয়েছে
(যোহন ১:১২)
খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার পর থেকেই শুরু হয়েছে
(কলসীয় ২:৬)
অনন্তকালস্থায়ী
(১ম পিতর ১:৩,৪)
ব্যহত হতে পারে
(গীতসংহিতা ৩২:৩-৫)
একমাত্র ঈশ্বরই এর রক্ষণাবেক্ষণ করেন
(যোহন ১০:২৭-২৯)
রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
(১ম যোহন ১:৯)
কখনই পরিবর্তিত হয় না
(ইব্রীয় ১৩:৫)
আপনার পাপের সাথে পরিবর্তিত হয়
(গীতসংহিতা ৬৬:১৮)

আপনি যখন যীশুকে আপনার পাপের মূল্য দাতা হিসেবে বিশ্বাস করেছিলেন তখন থেকেই ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্ককে পাপ কোন কিছুই করতে পারে না। খ্রীষ্ট আপনার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। সেই সময়ে আপনার সম্পূর্ণ জীবনটাই ভবিষ্যতের অধীনে ছিল। খ্রীষ্টকে বিশ্বাসের কারণে, আপনাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করা হয়েছে। ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্ক সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।

কিন্তু পাপ ঈশ্বরের সাথে আপনার সহভাগিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ( সহভাগিতা বলতে, আপনার পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়কালকে বোঝানো হচ্ছে।) আপনার সাথে তাঁর যোগাযোগ এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে চলার ক্ষেত্রে পাপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। খ্রীষ্ট আপনাকে যা ভাবাতে চান এবং যা করাতে চান সেই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে পাপ আপনাকে নিস্তেজ করে তোলে।

গীতসংহিতা ৩২:৩-৫ বলে যে,‘‘ আমি যখন পাপ স্বীকার করি নি তখন সারা দিন কোঁকাতে কোঁকাতে আমার হাড় ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল; কারণ তখন দিনরাত আমার উপরে তোমার হাতের চাপ ভারী ছিল; গরমকালের গরমে যেমন হয় তেমনি করে আমার দেহের শক্তি কমে যাচ্ছিল। [সেলা] তখন আমার পাপ আমি তোমার কাছে স্বীকার করলাম, আমার অন্যায় আমি আর ঢেকে রাখলাম না। আমি বলেছিলাম, “আমার বিদ্রোহের কথা আমি সদাপ্রভুর কাছে স্বীকার করব।” তাই পাপের দরুন আমার দোষ তুমি ক্ষমা করে দিলে।’’

এটাই হল পাপের প্রতি সঠিক জবাব। তিনি পাপকে অস্বীকার করেন নি। তিনি এটা নিয়ে ব্যস্তও হন নি। তিনি তা স্বীকার করেছেন।

পাপস্বীকার করা এবং অনুতাপ করা

পাপস্বীকার করা এবং অনুতাপ করার অর্থ কি? প্রথমত, স্বীকার করা হল ঈশ্বরের সাথে একমত হওয়া। তিনি ইতোমধ্যে জানেন যে আপনি পাপ করেছেন, তাই এই বিষয়ে আপনাকে সৎ থাকা উচিত! ‘‘যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না।’’ (১ম যোহন ১:৯) স্বীকার করা মানে হল আমাদের পাপকে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেয়া এবং আমাদের এই পাপ সম্বন্ধে ঈশ্বরের মনোভাবকে স্বীকার করে নেওয়া।

স্বীকার করা মানে এই নয় যে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া। খ্রীষ্ট ইতোমধ্যেই আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে দিয়েছেন এবং আমরা যখনই পাপ স্বীকার করি তখনই আমরা সয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর ক্ষমা পাই। শুধুমাত্র ক্রশে খ্রীষ্টের মৃত্যুবরণের কারণেই ঈশ্বর আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা করে দিচ্ছেন, এটা আপনার পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া বা নম্রতার জন্য নয়।

অনুতাপ করা মানে হল পাপ সম্বন্ধে আপনার সচেতনতার ফলস্বরূপ কার্যক্রম পরিবর্তন করা। এইখানে, আপনি যে ভুল করেছেন এবং পরবর্তীতে আপনি আর কখনও এই কাজ করবেন না সে বিষয়ে ঈশ্বরের সাথে সম্মত হওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু তবুও আমি অপরাধবোধ করছি!

এমন সময় আসবে যখন নিজের পাপ স্বীকার করার পরেও নিজেকে অপরাধী মনে হবে। এটাকে একরকম আধ্যাত্নিক বিষয় বলে মনে হয় যে এই ধরনের মারাত্বক পাপ করার জন্য নিজেকে নত করতে হবে এবং আমরা ভাবি যে যদি আমরা নিজেদের চোখে নিজেদেরকে নিচু করে দেখি তাহলে ঈশ্বর আমাদের এই নম্রতা দেখে সন্তুষ্ট হবেন।

কিন্তু ঈশ্বর আমাদেরকে এভাবে দেখেন না। খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমাদের যে পাপ মুছে ফেলা হয়েছে সেটার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়া হল পাপস্বীকারের একটি অংশ। এই বিষয়ে ঈশ্বর বলেন,‘‘সেইজন্য আমি তাদের অন্যায় ক্ষমা করব, তাদের পাপ আর কখনও মনে রাখব না।’’ (ইব্রীয় ৮:১২) কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনের একটি অংশ হল বিশ্বাস কারণ আপনি যেটা অনুভব করছেন সেটার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্য যা বলছে সেটাকে আপনি সত্য বলে বিশ্বাস করেছেন। নিজেকে তীব্রভাবে ধমক দেয়ার বিষয়টি খ্রীষ্ট এবং তাঁর ক্ষমার কাছে না নিয়ে গিয়ে বরং আপনাকে আপনার পাপের দিকে নিয়ে যায়।

মাঝে মাঝে আমরা পাপের প্রলোভনে পড়ি। কিন্তু মনে রাখবেন যে প্রত্যেকেই প্রলোভনে পড়েন। এমনকি যীশুকেও প্রলোভন দেখানো হয়েছিল কিন্তু তিনি সেই প্রলোভনে পড়েন নি- তিনি কোন পাপ করেন নি। যদি আপনাকে প্রলোভনে ফেলা হয় তাহলে নিজেকে শাস্তি দেবেন না। আপনি প্রলোভনের বিষয়ে না ভাবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং এই পাপ এড়িয়ে যাবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শক্তি চাইতে পারেন। প্রলোভনে পড়লে এটা নিয়ে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। যখন আপনি প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, তখন শেখার জন্য চমৎকার এই পদটি মনে রাখবেন, ১ম করিন্থীয় ১০:১৩।

ঈশ্বর আপনার সমস্ত কিছুকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করেছেন। ‘‘যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।’’ (রোমীয় ৮:১) তিনি আপনার পাপের জন্য বা আপনার দোষের জন্য আপনাকে এখন আর নিচু করে দেখেন না, আর আপনারও তাই করা উচিত। ঈশ্বর আবারও বলেন,‘‘ আমি তাদের পাপ ও অন্যায় আর কখনও মনে রাখব না।’’ (ইব্রীয় ১০:১৭) অপরাধবোধের কালো মেঘ আর নেই! ঈশ্বরের পূর্ণ ক্ষমাকে গ্রহণ করুন।

‘‘জীবনদাতা পবিত্র আত্মার নিয়মই খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাকে পাপ ও মৃত্যুর নিয়ম থেকে মুক্ত করেছে।’’ (রোমীয় ৮:২) খ্রীষ্টিয় জীবন হল স্বাধীনতার জীবন: যেখানে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি এবং ঈশ্বর যেভাবে চান সেরকম জীবন-যাপন করার স্বাধীনতা রয়েছে আর এটিই শেষ পর্যন্ত সবচাইতে পরিতৃপ্তিমূলক জীবন। এটা হল খ্রীষ্টের মত হয়ে ওঠা এবং নিজেদের জীবনে খ্রীষ্টকে প্রতিফলিত করার বৃদ্ধিমূলক একটি প্রক্রিয়া। এটা বৃদ্ধি পেতে সময়ের প্রয়োজন হয়।

(১) চার্লস সুইনডোল, কাম বিফোর উইনটার (পোর্টল্যান্ড প্রেস, ১৯৮৫), পি, ৮৯