×
অনুসন্ধানें

ঈশ্বর আমার কাছ থেকে কি চান?

যদি আপনি অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানদের মত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার জীবনের মাধ্যমে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাইবেন। একই সময়ে, সত্য বিষয় হল যে খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের জন্য আপনি ক্লান্তও হয়ে যাবেন।। মাঝে মাঝে তখন জীবনকে অনেক চাপযুক্ত মনে হয়।

আমি যখন একজন নাস্তিক ছিলাম, তখন পাপ আমার জন্য কোন বিষয়ই ছিল না। আমি আসলে সেটা সম্বন্ধে ভালভাবে জানতামই না। তখন আমার মধ্যে কোন অপরাধবোধ কাজ করত না। কিন্তু যখন আমি একজন খ্রীষ্টিয়ান হলাম... ওয়াও। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে আমি যেসব কাজ করছিলাম সেইসব কাজ ঈশ্বর আমার জীবনে চান না। আমি অন্যদেরকে ভালবাসা, বাইবেল পড়া, প্রার্থনা, সাক্ষ্য দেওয়ার, শিষ্যত্বকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারলাম। আর সেই সময়ে আমার মনে হতো যে ‘‘নাস্তিক থাকাটাই অনেক সহজ ছিল।’’ তখন আমার মনে হচ্ছিল যে তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার উপর অনেক দায়িত্ববোধের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে বাইবেল পড়তে হবে, আদেশ পড়তে হবে, এবং প্রতিটি পদ পড়ার পর আমার মনে হতো, ‘‘তাই তো, এটা ভাল একটা উপায়। আমাকে এটি আরও বেশি করে করতে হবে।’’

সৌভাগ্যবশত, ঈশ্বর আমাকে শাস্ত্রের এমন একটি অংশ শিখিয়েছিলেন যেটি আমাকে এই অতিরিক্ত দায়িত্বভারের বোঝা, লোকদেখানোর মনোভাব এগুলো থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করেছিল যাতে করে আমি আবারও ঈশ্বরকে দেখতে পারি এবং তাঁর সাথে- আমার সম্পর্কের গভীরতাকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারি। শাস্ত্রে রোমীয়, গালাতীয়, ইফিষীয়, ১ম এবং ২য় করিন্থীয়... এবং সারা বাইবেল জুড়েই এই বিষয়ে অনেকগুলো নীতি রয়েছে।

এটা হল এই : ঈশ্বর আপনাকে নিখুঁত হিসেবে চান না। ঈশ্বর আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেন না। ঈশ্বর কখনও চিন্তা করেন নি যে আপনি খ্রীষ্টিয়ান জীবন যাপন করবেন, তিনি এটাও প্রত্যাশা করেন না যে আপনি তাঁর পবিত্রতার সাক্ষাতে যাবেন। যদি তিনি আপনার প্রতি এটা ভাবতেন তাহলে তিনি কখনই পৃথিবীতে এসে আপনার জন্য মরতেন না। কিন্তু তিনি সেটাই করেছেন।

যীশু জনতার দিকে বললেন,‘‘ তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন খাঁটি তোমরাও তেমনি খাঁটি হও।’’ সুতরাং, এটা সত্য যে ঈশ্বরের আইনসমূহ, আদেশসমূহের জন্য আমাদের খাঁটি হওয়া প্রয়োজন। আর যদি আমরা তাঁর আদেশমত জীবনযাপন করে তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই খাঁটি হতে হবে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, যীশু আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করে তার মূল্য দেবার জন্য এসেছিলেন!

ঈশ্বর তাঁর নিখুঁতত্ব এবং আপনার পাপপূর্ণতার মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে সে বিষয়ে সচেতন আছেন। এমনকি খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে, আমাদের মধ্যে এই শূন্যতা পূরণের জন্য অবিরত এক মানসিক চাপ রয়েছে, যাতে আমরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হতে পারি। অনেকে হয়তো ঈশ্বরের মানকে খাটো করে এই দূরত্ব দূর করার চেষ্টা করবে : “ঈশ্বর আসলে এটা বোঝাননি…” অন্যেরা হয়তো তাদের কাজ দিয়ে সেই দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে “ আমি আরো চেষ্টা করবো…”

ঈশ্বর এই দূরত্ব সম্পর্কে কি বলেন? এটি আছে এবং সবসময় থাকবে। কিন্তু এই আপনি, যিনি যীশুর উপর বিশ্বাস এনেছেন, যীশুকে আপনার জীবনে আসতে দিয়েছেন, ক্ষমা পেয়েছেন, ধার্মিক গণিত হয়েছে, তাঁর চোখে মূল্যবান হয়েছেন, তাঁর যত্নশীল হাতের নিচে আছেন। আপনি সম্পূর্ণভাবে তাঁর হয়েছেন এবং এই দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি আপনাকে নিঃশর্তভাবে ভালবাসেন।

‘‘বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে আর তার ফলেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে শান্তি হয়েছে।ঈশ্বরের এই যে দয়ার পথে এখন আমরা চলছি সেখানে আমরা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসের দ্বারাই পৌঁছেছি। ঈশ্বরের মহিমা পাবার আশায় আমরা আনন্দ বোধ করছি।’’

তবে সম্ভবত আপনার জীবনের এমন একটি পর্যায়ে আসবে যখন আপনি ভাবতে শুরু করবেন যে নিশ্চয়ই ঈশ্বর এখন আমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাচ্ছেন।

এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের জন্য এখনই আপনার কিছু করতে হবে এমন অনুভূতির ফাঁদে পড়া থেকে আপনাকে অবগত করা। শাস্ত্রে আমাদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, কারণ এটা আপনার কাছ থেকে খ্রীষ্টকে জানার আনন্দটাকে কেড়ে নেবে।

তাই, আসুন ঈশ্বরের সাথে আপনার সম্পর্কের বিষয়ে ঈশ্বর নিজে কি বলেন তা গুরুত্বের সাথে নেওয়া যাক। তিনি নিজের সম্পর্কে কি বলেন সেই বিষয়ে ভিত্তিমূলক নিয়মগুলো দেখা যাক।

কিভাবে আপনি একজন খ্রীষ্টিয়ান হয়ে ওঠেন

যখন আপনি একজন খ্রীষ্টিয়ান হয়ে ওঠেন, তখন ঈশ্বর আপনার দায়িত্ববোধের বোঝাটি বহন করছেন সেটার বিপরীতে আপনার প্রচেষ্টার প্রক্রিয়াটি দেখুন:

  • আপনি যাতে ঈশ্বরের চোখে পবিত্র ও নিখুঁত হতে পারেন সেইজন্য ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করবার আগেই খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের বেছে নিয়েছেন।
  • ঈশ্বর আপনার জন্যই এই পৃথিবীতে এসেছিলেন।
  • ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে আপনার পাপের জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
  • ঈশ্বর নিশ্চিত করেছেন যে আপনার কাছে যাতে সুসমাচার পৌঁছায়।
  • ঈশ্বর আপনার জীবনে আসতে চান।
  • আপনি যাতে ঈশ্বরকে জানতে পারেন এবং তাঁর প্রতি সাড়াদান করতে পারেন সেজন্য তিনি আপনাকে আকাঙ্খা দিয়েছেন।
  • আপনি তাঁর দিকে ফিরেছেন এবং তাঁকে গ্রহণ করেছেন।
  • ঈশ্বর আপনার জীবনে প্রবেশ করেছেন, আপনাকে ধার্মিক বলে গণ্য করেছেন এবং ক্ষমা করেছেন, এবং আপনাকে তাঁর বলে গণ্য করেছেন।

আপনি শুধু ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস আনার মাধ্যমেই একজন খ্রীষ্টিয়ান হয়েছেন। ঈশ্বর চান যেন আমরা ঠিক এইভাবেই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে সাড়াদানের মাধ্যমে খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করি। দায়িত্ববোধের বোঝা (এবং সক্ষমতা) ঈশ্বরের সাথেই থাকে। আপনি হয়ত ভাবতে পারেন যে,‘‘এটা তো বেশ সহজ। এটা এমন কি বড় বিষয়?’’ এখানে সমস্যা হল প্রত্যেক খ্রীষ্টিয়ানই এক সময় না এক সময়ে এই বিষয়টা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন। কেন?

ঈশ্বর আপনাকে যা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আপনি তাঁর কাছে ঋণী এটা ভাবা হল মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটাও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির একটি চিন্তা যে এখন আপনি বাইবেল সম্পর্কে কিছুটা জানেন, বা এখন আপনি আপনার প্রার্থনা সম্পর্কে কিছুটা জানেন, বা অন্যেরা যখন ঈশ্বর সম্বন্ধে কোন কথা বলে সেটা আপনি এখন কিছুটা বুঝতে পারেন ... এখন আপনার ‘‘ভাল একজন খ্রীষ্টিয়ান’’ হয়ে ওঠার দায়িত্ব নিতে হবে। এমন কিছু নেই যা ঈশ্বরকে জানার ক্ষেত্রে আপনার আনন্দকে আরও তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলবে।

আর যদি, আপনি নিজে থেকে এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ততে না আসেন যেটা হল আপনাকে এখনই ঈশ্বরের জন্য কাজ করা শুরু করতে হবে, তাহলে দুর্ভাগ্যবশত অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানেরা আপনাকে অপরাধবোধ, ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলার চাপ এবং প্রত্যাশাগুলোকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী। (আশাতীতভাবে) এই প্রবন্ধটি আপনাকে শাস্ত্রের আলোকে এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে কিভাবে ঈশ্বরের জন্য কিছু করার ভ্রান্ত প্রত্যাশা না করেই খ্রীষ্টিয় জীবন যাপন করা যায়। এটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে ঈশ্বর আপনাকে কতটা গভীরভাবে ভালবাসেন এবং কিভাবে তিনি আপনাকে তাঁর সাথে যুক্ত করতে চান।

ঈশ্বর তাঁর সাথে আপনার সম্পর্ককে আপনার উপর নির্ভরযোগ্য করে তৈরী করেন নি, বরং তিনি নিজের উপর নির্ভরযোগ্য হিসেবেই তৈরী করেছেন। আমি এই পদগুলোর ব্যাখ্যা দিচ্ছি:

কিভাবে আমরা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য?

আপনি তাঁর অনুগ্রহের (করুণা) মাধ্যমে ক্ষমা পেয়েছেন বলে ঘোষিত হয়েছেন, কারণ যীশু আপনার জন্য মরেছেন। আপনি তাঁর কাছ থেকে এটা বিশ্বাস করার মাধ্যমে ক্ষমা পেয়েছেন যে যীশু আপনার পাপের মূল্য দিয়েছেন, তাই না? এই ক্ষমা আপনাকে অর্জন করতে হয় নি। ঈশ্বর যখন বলেছেন যে তিনি আপনাকে ক্ষমা করেছেন তখন আপনি শুধু এতে বিশ্বাস করেছেন।

‘‘...যখন আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের দয়া ও ভালবাসা প্রকাশিত হল তখন তিনি পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন। কোন সৎ কাজের জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেন নি, তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন।’’

‘‘ঈশ্বরের অশেষ দয়া অনুসারে খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর রক্তের দ্বারা আমরা মুক্ত হয়েছি, অর্থাৎ পাপের ক্ষমা পেয়েছি।’’১০

ঠিক আছে, আমরা তো এখন খ্রীষ্টিয়ান, এতে করে কি নিয়মগুলো পরিবর্তিত হয়েছে? এখন কি আপনার প্রতি ঈশ্বরের অনেকগুলো প্রত্যাশার তালিকা রয়েছে? না। এখন হয়ত আপনি ভাবতে পারেন যে,‘‘দাঁড়ান। গোটা বাইবেলটাই তো আদেশে পূর্ণ। এটা পড়ার সময় একটিও অনুচ্ছেদও পাওয়া যাবে না যেখানে কোনটি করতে হবে আর কোনটি করা যাবে না এমনটা বলা হয় নি।’’ এটা সত্য। কিন্তু ঈশ্বর যখন আপনাকে আদেশ দেন, তখন তিনি আপনাকে এটাও বলেন যে আপনি এই আদেশগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করতে পারবেন না। আসলে, তিনি আপনাকে এটা বলেন যে আইন-কানুন পালন করলেই যে ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করবেন তা নয়, কিন্তু আইন- কানুনের মধ্য দিয়েই মানুষ নিজের পাপের বিষয়ে চেতনা লাভ করে।১১ আর আপনি যতই চেষ্টা করবেন ততই আপনার মনে হবে যে আপনি ব্যর্থ হচ্ছেন, নিজেকে ঈশ্বরের বিচারাধীন এবং শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন, এবং নিজেকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে বলে মনে হবে।

প্রেরিত পৌল এই হতাশা নিয়ে বলেছেন আর এই হতাশা তিনি নিজেও অনুভব করেছেন। তিনি ঈশ্বরের আইন দেখেছেন এবং বলেন,‘‘আদেশ পবিত্র, ন্যায্য ও উপকারী।’’ তবুও তিনি যতই আইন অনুযায়ৗ জীবন যাপন করার চেষ্টা করেছেন ততই পাপ করেছেন। তিনি বলেছেন,‘‘ যা সত্যিই ভাল তা করবার আমার ইচ্ছা আছে কিন্তু শক্তি নেই .... বরং তার বদলে যা চাই না সেই সব মন্দ কাজই আমি করতে থাকি।’’১২ চরম নৈরাশা নিয়ে তিনি বলেছেন,‘‘ কি হতভাগা মানুষ আমি! আমার মধ্যে এই যে পাপ-স্বভাব যা মৃত্যু আনে, তার হাত থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন।’’১৩

ব্যর্থতা, পাপ, নিন্দা এগুলোকে শাস্ত্রের সামনে আনা প্রয়োজন। ‘‘যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।’’১৪ ‘‘আমরা যখন ঈশ্বরের শত্রু ছিলাম তখন তাঁরই পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর সংগে আমাদের মিলন হয়েছে। এইভাবে মিলন হয়েছে বলে খ্রীষ্টের জীবন দ্বারা আমরা নিশ্চয়ই পাপ থেকে উদ্ধার পাব।’’১৫

সুতরাং, যখন আপনি ঈশ্বরের আদেশগুলোর দিকে দেখবেন তখন আপনি নিজের চেষ্টায় তাঁর বাধ্য হবার চেষ্টা করবেন না... কিন্তু এর পরিবর্তে আপনার ভেতরে যিনি বাস করেন, সেই ঈশ্বরকে অনুরোধ করুন যেন তিনি এটাকে আপনার ভেতরে তৈরী করেন। যদি ঈশ্বর একে অন্যকে ভালবাসতে বলে থাকেন তবে তিনি চান না যাতে আপনি উদ্যমী দায়িত্ব নিয়ে চলতে থাকেন এবং ঈশ্বরকে দেখাতে পারেন যে আপনি কতটা প্রেমময়। এর পরিবর্তে তিনি চান যেন আপনি তাঁর উপর নির্ভর করেন,‘‘প্রভু, আমি তোমাকে আমার হৃদয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি এবং তুমি এই ব্যক্তিকে যেভাবে দেখ সেইভাবে আমাকেও দেখতে সাহায্য কর, এবং তুমি যেভাবে এই ব্যক্তিকে ভালবেসেছ ঠিক একইভাবে আমার হৃদয়েও সেই ভালবাসা দাও যেন আমিও একে তোমার মত করে ভালবাসতে পারি। আমি নিজে থেকে তাদেরকে ভালবাসতে পারি না, কিন্তু আমি তোমাকে অনুরোধ করছি যাতে আমার জীবনে তাদের জন্য তোমার সেই মহৎ ভালবাসা জন্মায়।’’

এখানে পার্থক্যটা কি?

এখানে পার্থক্যটা হল ঈশ্বরের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য চেষ্টা করা, সেইসকল বাক্য যেগুলো ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল এবং তাঁর উপর নির্ভর করে আপনার মাধ্যমে বেঁচে থাকা। আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীনতায় পরিপক্ক হই না। আমরা শুধু তাঁর উপর নির্ভরশীল হওয়ার মাধ্যমেই পরিপক্ক হই আর তিনি এটাই চান। তিনি চান যেন আপনি এই স্বাধীনতাকে উপভোগ করেন, এবং তাঁর সাথে সম্পর্কের ভালবাসায় জড়ান, তাঁকে বিশ্বাস করেন, তাঁর উপর নির্ভর করেন। তিনি চান না যাতে আপনি তাঁর প্রতি লোক দেখানো কোন কিছু করেন।

বাইবেল ঈশ্বরের আদেশগুলোকে ‘‘আইন’’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এখন আপনি যে এখন একজন খ্রীষ্টিয়ান হয়েছেন সেজন্য আপনি আর কোন আইন বা ঈশ্বরের বিচার বা তাঁর শাস্তির আওতার মধ্যে নেই-কিন্তু এর পরিবর্তে আপনি ক্ষমা পেয়েছেন এবং অনন্ত জীবন পেয়েছেন। আপনাকে আইনের দাবি থেকে মুক্ত করা হয়েছে।

পৌল বলেছেন,‘‘ আমরা এই কথা জানি যে, আইন-কানুন পালনের জন্য ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন না, বরং যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্যই তা করেন। সেইজন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাস করেছি, যেন আইন-কানুন পালনের জন্য নয় বরং খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্যই আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়; কারণ আইন-কানুন পালন করবার ফলে কাউকেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে না।’’১৬

ঈশ্বরের আদেশ এবং সেগুলোকে পালন করার জন্য পৌল কতটা মনোযোগ দিয়েছেন? ‘‘...আইন- কানুন দ্বারাই আমার মৃত্যু হয়েছে যেন আমি ঈশ্বরের জন্য বেঁচে থাকতে পারি। আমাকে খ্রীষ্টের সংগে ক্রশে দেওয়া হয়েছে..., খ্রীষ্টই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই দেহে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছি। এই দয়াকে আমি বাতিল করব না, কারণ মানুষ যদি আইন-কানুন পালনের মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হতে পারে তবে খ্রীষ্ট মিথ্যাই মরেছিলেন।’’১৭

যীশুকে গ্রহণ করার আগে, আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে ছিলেন, তখন আপনি শুধু ঈশ্বরের আইন-কানুন পালন করতে পারতেন এবং আপনি ঈশ্বরের বিচারের আওতাধীন ছিলেন। কিন্তু এখন আপনি খ্রীষ্টকে জেনেছেন এবং তাঁর আত্মা আপনার ভেতরে বসবাস করছে।

প্রভু বলেন, “পরে আমি তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করব তা হল, আমার আইন-কানুন আমি তাদের অন্তরে রাখব এবং তাদের মনের মধ্যে তা লিখে রাখব।”এর পরে পবিত্র আত্মা বলেছেন, “আমি তাদের পাপ ও অন্যায় আর কখনও মনে রাখব না।’’১৮ তাই, আপনার বাহ্যিক আইন-কানুন, যেটি আপনাকে দাবি এর মাধ্যমে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেছে সেটির পরিবর্তে ঈশ্বর আপনার অন্তরে আইন-কানুন লিখে রাখবেন, এবং যখন পবিত্র আত্মা আপনাকে পরিবর্তন করবেন, তিনি আপনাকে এমন সব বৃদ্ধিমূলক আকাঙ্খা দেবেন যেটি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবে। সময়ের সাথে সাথে, ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে আপনি যখন বৃদ্ধি পাবেন, তখন তিনি আপনার আকাঙ্খা তৈরী করতে থাকবেন এবং তাঁর সন্মুখে পবিত্র জীবন যাপন করার জন্য আপনাকে সক্ষম করে তুলবেন।

‘‘ঈশ্বরের দয়ায় বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। এটা তোমাদের নিজেদের দ্বারা হয় নি, তা ঈশ্বরেরই দান।এটা কাজের ফল হিসাবে দেওয়া হয় নি, যেন কেউ গর্ব করতে না পারে।’’১৯

আপনার জীবনের জন্য ঈশ্বর এমন একটি পরিকল্পনা করেছেন যেখানে আপনার জীবনের মাধ্যমে অন্যেরা সাহায্য পাবে এবং তাঁর গৌরব সাধিত হবে। এখন আপনার সম্পর্ক ঈশ্বরের সাথে, তাঁর জীবন আপনার মধ্যে রয়েছে যেটি আপনার মধ্যে ভাল কাজ করার জন্য উৎসাহিত করবে।

পাপ নিয়ে কি করা যায়?

এখন আমি এই প্রশ্নটি করছি: কেমন হবে যদি আপনি তাঁকে আপনার জীবনে কোন কিছু তৈরী করতে অথবা আপনাকে নির্দিষ্ট কোন পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন কিন্তু এর পরও আপনি সেই বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করছেন? যদি আপনি দেখেন যে এখনও আপনি আপনার বদ মেজাজ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি বা নিজেকে প্রলোভনের হাত থেকে সরাতে পারছেন না বা আপনার যেভাবে বাইবেল পাঠ এবং প্রার্থনা করা দরকার সেভাবে আপনি করছেন না তাহলে কেমন হবে? তারপর কি হবে? ঠিক এই সময়েই কি খ্রীষ্টিয়ান জীবনের দায়িত্বভার নিতে হবে এবং এর প্রতি আপনার সবটুকু চেষ্টা দিতে হবে? না। যে মুহূর্তে আপনি ঈশ্বরের সামনে লোকদেখানো কি শুরু করতে যাবেন, সেই সময় থেকে আপনি আরও ব্যর্থ হতে শুরু করবেন, আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে যতই দূরে সরে যাবেন, তখন আপনার জীবন থেকে তাঁকে জানার আনন্দটা ততই কমতে থাকবে।

একজন খ্রীষ্টিয়ানের পক্ষে এটা চিন্তা করাটা বেশ সহজ যে ঈশ্বর চেষ্টার মূল্য দিয়ে থাকেন, কারণ আমাদের গোটা সমাজটা এভাবেই গড়ে উঠেছে... দায়িত্বশীল হওয়া, কঠোর পরিশ্রম করা, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করা... এবং এর জন্য আপনাকে পুরষ্কৃত করা হবে। এখন খ্রীষ্টিয়ান বাইবেলের আদেশগুলো দেখে বলতে পারে,‘‘হ্যাঁ, যদি আমি যথেষ্ট চেষ্টা করি তাহলে আমি এটা করতে পারব।’’ আর এভাবেই তারা অনেক হতাশার দিকে যায়, কারণ বাইবেল বলে যে শুধুমাত্র আইনের প্রতি মনোনিবেশ করাটা একটি জিনিসই নিয়ে আসে... সেটা হল নিজের পাপের প্রতি সচেতনতা। ঈশ্বর আপনার সাথে তাঁর সম্পর্কটাকে শুধুমাত্র প্রচেষ্টা এবং অনুরোধের জন্য তৈরী করেন নি। কিন্তু তিনি এটাকে এমনভাবে তৈরী করেছেন যে, তিনি চান যেন তাঁকে বিশ্বাস করে আপনার জীবনে এমন কিছু তৈরী হয় যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে।

যতদিন পর্যন্ত আপনি এই পৃথিবীতে থাকবেন ততদিনই আপনি পাপ করবেন। এই জীবনকালে আপনি কখনই নিখুঁত হতে পারবেন না। এই বিষয়টি শুধু আপনিই না, বরং ঈশ্বরও জানেন। আপনি আপনার জীবনের পাপগুলো বুঝতে পারবেন, পাপ স্বীকার করবেন, এবং বিশ্বাস করবেন যে তিনি আপনাকে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন:

‘‘যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না।’’২০

ঈশ্বর যখন আপনাকে পরিবর্তিত করছেন সে বিষয়ে ধৈর্যশীল হোন

ঈশ্বরকে জানার প্রতি মনোনিবেশ করুন। প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ, অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানদের সাথে সহভাগিতা এবং শিক্ষাদান... এবং ভাল যা কিছু আছে সেগুলো করার মাধ্যমে তাঁকে জানার অন্বেষণ করুন। কিন্তু আপনার প্রচেষ্টার উপর বিশ্বাসকে রাখবেন না, এর পরিবর্তে আপনার জীবনে ঈশ্বরের কাজ এর উপর বিশ্বাস রাখুন। আঙ্গুর যেভাবে দ্রাক্ষালতার উপর ভর করে থাকে সেটার সাথে যীশু এটার তুলনা করেছেন। এখানে যীশুই প্রধান দ্রাক্ষালতা এবং আমরা হলাম ডাল-পালা। ‘‘আমার মধ্যে থাক আর আমিও তোমাদের অন্তরে থাকব। আংগুর গাছে যুক্ত না থাকলে যেমন ডাল নিজে নিজে ফল ধরাতে পারে না তেমনি আমার মধ্যে না থাকলে তোমরাও নিজে নিজে ফল ধরাতে পার না।’’২১

যীশু আরও বললেন,‘‘ পিতা যেমন আমাকে ভালবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালবেসেছি। আমার ভালবাসার মধ্যে থাক।’’২২

‘‘আমার আদেশ পালন কর’’ এর মাধ্যমে যীশু কি বোঝাতে চেয়েছেন?

বেঁচে থাকার সঠিক উপায়, যে উপায়ে আপনি যীশুর বলা পরিপূর্ণ জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন, এবং আরো সহজভাবে তাঁর ভালবাসায় আকর্ষিত হবেন তা হলো যীশু যা বলেছেন তা করার মধ্য দিয়ে। যীশু বলেছেন,‘‘ আমি আমার পিতার সমস্ত আদেশ পালন করে যেমন তাঁর ভালবাসার মধ্যে রয়েছি, তেমনি তোমরাও যদি আমার আদেশ পালন কর তবে তোমরাও আমার ভালবাসার মধ্যে থাকবে। এই সব কথা আমি তোমাদের বললাম যেন আমার আনন্দ তোমাদের অন্তরে থাকে ও তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়।’’২৩ তিনি চান যেন তিনি যেভাবে বলেছেন আমরা ঠিক সেভাবেই জীবন যাপন করি এবং তাঁর ভালবাসার অভিজ্ঞতা পাই এবং একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে আপনার মনের আনন্দ যাতে পরিপূর্ণতা পায়। কিন্তু যে উপায়ে আপনি তার আদেশের বাধ্য হতে পারেন তা হল তার উপর নির্ভর করা যেন মনে হয় আপনিই সেই আদেশগুলো পালন করছেন।

তাই যখন আমি বাইবেলের কোন পদ দেখি সেখানে ঈশ্বর বলেন,‘‘এটা কর...’’আমি তখনই ঈশ্বরকে বলি,‘‘ এটা অবশ্যই একটি ভাল ধারণা। আমি আমার জীবনের দ্বারা তোমাকে সন্তুষ্ট করতে চাই এবং তোমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমার জীবনের প্রয়োজনীয় সব কিছু তোমার আত্মার মাধ্যমে তৈরী কর। এইভাবে তোমার প্রতি বাধ্য থাকার ক্ষমতা আমাকে দাও। প্রভু, যদি আমি ভেবে থাকি যে আমি এটা নিজেই করতে পারব তাহলে আমি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমকে অনুরোধ করছি যে, আমার চিন্তা বা আমার জীবনের কাজকে তুমি যেভাবে চাও সেভাবে পরিবর্তন কর, যে জীবনে আমি এই পদটির সাথে সংযুক্ত থাকতে পারি। ‘‘ আর তারপর আমি আর সেটা নিয়ে চিন্তা করব না। আমি হয়ত এই পদটি লিখতে পারি এবং তারপর এটা শিখব, এটা নিয়ে ভাববো, এমনকি হয়ত মুখস্তও করব। কিন্তু এটা করার জন্য ঈশ্বরের উপর আমার বিশ্বাস থাকবে।

তিনি আপনাকে আইন থেকে মুক্ত করেছেন, এবং তাঁর কাছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, তাঁর উপর নির্ভর করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন... যেখানে আপনি তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার পূর্ণ আনন্দ নিতে পারবেন।

‘‘ঠিক সেইভাবে আমার ভাইয়েরা, খ্রীষ্টের দেহের মধ্য দিয়ে মোশির আইন-কানুনের দাবি-দাওয়ার কাছে তোমরাও মরেছ। তার ফলে যাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছে তোমরা সেই যীশু খ্রীষ্টেরই হয়েছ, যেন ঈশ্বরের জন্য তোমাদের জীবন ফলবান হয়ে ওঠে।’’২৪

‘‘আইন-কানুন থেকে এখন আমরা মুক্ত। তার ফলে আমরা এখন লেখা আইন-কানুনের সেই পুরানো জীবন-পথের দাস নই, কিন্তু পবিত্র আত্মার দেওয়া নতুন জীবন-পথের দাস হয়েছি।...’’২৫

‘‘খ্রীষ্টই আইন-কানুন পূর্ণ করে তার শক্তি বাতিল করেছেন, যেন তাঁর উপর যারা বিশ্বাস করে তারা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হয়।’’২৬

‘‘কিন্তু যে নিজের চেষ্টার উপর নির্ভর না করে কেবল ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে ঈশ্বর তার সেই বিশ্বাসের জন্য তাকে নির্দোষ বলে ধরেন...’’২৭

১. রোমীয় ৫:১,২ ২. ইফিষীয় ১:৪; ২য় তিমথীয় ১:৯ ৩. যোহন ৩:১৬ ৪. রোমীয় ৫:৮ ৫. ইফিষীয় ১:১৩ ৬. প্রকাশিত বাক্য ৩:২০; যোহন ১:১২,১৩ ৭. প্রকাশিত বাক্য ৩:২০ ৮. ১ম যোহন ৩:১; কলসীয় ১:১৩,১৪; ইফিষীয় ১:৪; যোহন ১:১২ ৯. তীত ৩:৩-৭ ১০. ইফিষীয় ১:৭ ১১. রোমীয় ৩:২০ ১২. রোমীয় ৭:১৮,১৯ ১৩. রোমীয় ৭:২৪,২৫ ১৪. রোমীয় ৮:১ ১৫: রোমীয় ৫:৮-১০ ১৬. গালাতীয় ২:১৬ ১৭. গালাতীয় ২:১৯-২১ ১৮. ইব্রীয় ১০:১৬,১৭ ১৯. ইফিষীয় ২:৮,৯ ২০. ১ম যোহন ১:৯ ২১. যোহন ১৫:৪ ২২. যোহন ১৫:৯ ২৩. ১ম যোহন ১৫:১০,১১ ২৪. রোমীয় ৭:৪ ২৫. রোমীয় ৭:৬ ২৬. রোমীয় ১০:৪ ২৭. রোমীয় ৪:৫