×
অনুসন্ধানें

কিভাবে ঈশ্বর আমাদেরকে পরিবর্তন করেন

মাঝে মাঝে, আমরা আমাদের জীবনের এমন বিষয়গুলি নিয়ে সংগ্রাম করি, যেগুলো আসলে ভিন্ন রকমের হতে পারতো। সেটি হতে পারে নৈতিক অবক্ষয় বা অভ্যাস যা আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করে। সেই সব ক্ষেত্রগুলোতে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন? স্বাধীনতা এবং সত্যিকারের পরিবর্তনের কি কোন উপায় আছে? হ্যাঁ। ঈশ্বরের অনুগ্রহের বিষয়ে আমি যা বুঝেছি সেটা আমার জীবনে খুব শক্তিশালী পরিবর্তন এনেছে। আর আমি বিশ্বাস করি যে এটা আপনার জীবনেও শক্তিশালী এক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।M

যখন আপনি ঈশ্বরের অনুগ্রহের কথা শোনেন সেই মুহূর্তে আপনার কি মনে হয়? আমি মনে করি যে, এর সবচেয়ে ভাল সংজ্ঞাটা লেখক যোষেফ কোক তার এই লেখার মাধ্যমে দিয়েছেন যে,‘‘ অনুগ্রহ হল অপূর্ণতা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা, পাপের সম্মুখে আসা কোন মুখের চেয়ে কম বা বেশি কোনটাই নয়।’’

অনুগ্রহ কি?

এটা হল ঈশ্বরের অন্তরের এমন একটি গুণ যেটি আমাদের পাপের কারণে, বা আমাদের প্রতিহিংসাপরায়ণ অপরাধের কারণেও তার কাছে আমাদেরকে অগ্রহণযোগ্য হতে বাধা দেয়। এমনকি আমরা যখন তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত থাকি তখনও তিনি আমাদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে, যেখানে কুৎসিত, দুর্বল, অনুপযুক্ত, অযোগ্য, এবং ঘৃণ্য কোন কিছুর সম্মুখীন হতে হয়, সেখানে প্রেম থাকা উচিত । ঈশ্বর যোগ্যতা ছাড়াই আমাদের প্রয়োজনে সাড়া দিতে চান। আমরা এই অনুগ্রহ পাবার অযোগ্য।

ঈশ্বরকে যারা বিশ্বাস করে তাদের উপরে ঈশ্বরের অনুগ্রহ ভালবাসা, দয়া, ঢেলে দেওয়া হয়। যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস করবে তাদের উপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ, ভালবাসা, দয়া বর্ষিত হবে। এর জন্য আপনাকে মূল্য দিতে হবে না। তাঁর অনুগ্রহ পাবার জন্য আপনাকে শুধু তাঁর সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হতে হবে।

আমাদের তখনই ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রয়োজন যখন আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের জীবনে কিছু একটা ভুলভাবে চলছে—যেমন: ভুল সিদ্ধান্তসমূহ, কুঅভ্যাস, যেসব আচরণের কারণে আমরা লজ্জিত, এমন কোন ক্ষেত্র যেখানে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ চাই, কিন্তু এমন একটি জায়গা যেখানে আমরা ঈশ্বরনিন্দা করাকে ভয় করব। যদি আমরা খ্রীষ্টকে আমাদের অন্তরে গ্রহণ করে থাকি, তাহলে আমরা তাঁর বলে গণ্য হয়েছি, ক্ষমা পেয়েছি, আর এখন তাঁর অনুগ্রহের ছায়ায় আছি। তাঁর অনুগ্রহতেই আমরা স্বাধীন হই এবং পরিবর্তিত হই। এই কারণে তাঁর অনুগ্রহ সম্পর্কে শাস্ত্র আমাদের কি বলে সেটা জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের ভেতরের অবস্থাটা জানি, আমাদের প্রত্যেকেরই ভাল দিক এবং মন্দ দিক রয়েছে। আমাদের এমন একটা দিক আছে যেটা আমরা সবাইকে দেখাতে চাই— আর সেটা তখনই হয় যখন আমরা সঠিকভাবে আমাদের ভাল আচার-ব্যবহারগুলো প্রকাশ করি। আর তারপরই আমাদের এমন একটি দিক আসে যেটাকে আমরা লুকিয়ে রাখতে চাই—যেমন যেসব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা লজ্জিত।

আমরা এমন একটি সংস্কৃতিতে বাস করি যা আমাদেরকে আত্ন-উন্নতির দিকে নিয়ে যায়, আমরা নিজেদেরকে নিয়ে বিশ্লেষণ এবং নিজেদের খারাপ দিকগুলোকে কিভাবে ভাল করা যায় সেগুলো নিয়ে বেশ ভাল পরিমাণ সময় এবং শক্তি ব্যয় করে থাকি। আমরা কেনাকাটা করতে যাই বা শরীরচর্চা কেন্দ্রে যাই এবং সেখানে নির্ধারিত সময়, শক্তি, এবং অর্থ ব্যয় করি যাতে আমরা আমাদের খারাপ দিকগুলোকে ঠিক করে নিতে পারি। আর যে দিকটা আমরা ঠিক করতে পারি না, বা আমরা এখনও ঠিক করতে পারি নি, সেদিকটাকে আমরা লুকিয়ে রাখতে চাই।

লজ্জায় লুকিয়ে থাকা

আপনি কি কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন যখন আপনি কারো সাথে পরিচিত হচ্ছেন এবং ভেতরে ভেতরে আপনি এটা বলছেন যে, ‘‘আমার এই বিষয়টি সম্পর্কে তারা না জানুক?’’ অথবা আপনি একজন ভাল বন্ধুকে বলেছেন যে,‘‘আমার এই বিষয়টি সম্পর্কে কাউকে বলো না।’’ আমরা যখন ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্কে প্রবেশ করি, তখন আমরা হয়ত মনে করতে পারি যে তিনি আমাদের মতোই। আমরা ভেবে নিই যে আমাদের খারাপ দিকগুলো তাঁর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। তবে, আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিত্বের অগ্রহণযোগ্য দিকগুলোকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি তাহলে, আমরা আমাদের সত্যিকারের সত্ত্বাকে এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলবো।

ঈশ্বর এমন নন। তাঁর কাজ আমাদের কাজের মত নয়। তিনি শুধু আমাদের ভাল দিকগুলোকে গ্রহণ এবং খারাপ দিকগুলোকে উপেক্ষা করেন না। তিনি আমাদেরকে একক ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন। তিনি আমাদেরকে দ্বৈত ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে দেখেন না। তিনি বলেন, ‘‘তোমার খারাপ দিকগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা কোরো না। কারণ তুমি নিজে নিজে তা কখনই ঠিক করতে পারবে না। তুমি যতই চেষ্টা কর না কেন, সেটাকে ঠিকমত পূর্ণতা দিতে পারবে না, কারণ একমাত্র আমিই নিখুঁত। তোমার ভাল দিক এবং খারাপ দিক আমার কাছে নিয়ে আস এবং আমাকে তোমায় পরিপূর্ণ করতে দাও। ’’

কিভাবে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি?

আইন না বুঝে অনুগ্রহ বুঝতে পারাটা বেশ কঠিন। আমরা ঈশ্বরের নিখুঁত আইন, তাঁর আদেশ, তিনি যেমনভাবে আমাদের জীবন-যাপন চান... এবং খোলাখুলি বলতে গেলে, আমরা প্রায়শই এটা বুঝতে পারি না। ঈশ্বরের আদেশের এই আইন-কানুনগুলো দিয়ে আমরা কি করতে পারি? আইন-কানুন আমাদের কাছে একটা আয়নার মত। যখন আপনি বড় কোন আয়নাতে তাকান তখন আপনি হয়ত আপনার মুখে বড় কোন ময়লার ছাপ দেখতে পান যেটা যে সেখানে ছিল সেটা আপনি জানতেনই না। সেই আয়নাটি কিন্তু সেই ময়লা পরিষ্কার করতে পারবে না, কিন্তু দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়ার আগে আয়নাতে নিজের মুখটা দেখতে পেয়ে আপনি বেশ উপকৃত হয়েছেন। ঠিক একইভাবে, ঈশ্বরের আইন-কানুন আমাদের ভুল-ভ্রান্তি আর পাপকে সামনে তুলে ধরে আর আমরা সেগুলোকে দেখতে পেয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হই যাতে আমরা সেগুলোকে ঈশ্বরের সামনে নিয়ে যেতে পারি এবং ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে সেগুলোকে দূর করতে সাহায্য করবেন। গালাতীয় ৩:২৪ বলে,‘‘ তাহলে দেখা যায়, খ্রীষ্টের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য এই আইন-কানুনই আমাদের পরিচালনাকারী, যেন বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়।’’ যখন আমাদের যীশুকে জানার বিষয়টি আসে তখন আমাদের ত্রাণকর্তার প্রয়োজনের বিষয়টিও আসে। মূল বিষয়টি হল, আমাদের পুরো জীবন জুড়েই একজন ত্রাণকর্তার প্রয়োজন রয়েছে।

ইব্রীয় ৪:১৩-১৬ বলে যে: ‘‘সৃষ্টির কিছুই ঈশ্বরের কাছে লুকানো নেই। যাঁর কাছে আমাদের হিসাব দিতে হবে তাঁর চোখের সামনে সব কিছুই খোলা এবং প্রকাশিত। এইজন্য এস, আমরা খোলাখুলিভাবে ঈশ্বরের পুত্র যীশুর উপর আমাদের বিশ্বাসকে স্বীকার করে যাই, কারণ তিনিই আমাদের মহান মহাপুরোহিত যিনি স্বর্গে গিয়ে এখন ঈশ্বরের সামনে আছেন।আমাদের মহাপুরোহিত এমন কেউ নন যিনি আমাদের দুর্বলতার জন্য আমাদের সংগে ব্যথা পান না, কারণ আমাদের মত করে তিনিও সব দিক থেকেই পাপের পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন অথচ পাপ করেন নি।সেইজন্য এস, আমরা সাহস করে ঈশ্বরের দয়ার সিংহাসনের সামনে এগিয়ে যাই, যেন দরকারের সময় সেখান থেকে আমরা তাঁর করুণা ও দয়া পেতে পারি। ‘’

সত্য এবং নম্রতায় কাছে আসা

যখন আমরা অনুগ্রহ, সত্য এবং নম্রতার সিংহাসনের সামনে আসি তখনই আমরা অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি। যখন আমরা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি এবং আলোর দিকে না আসি তখনই আমরা সত্যের দিক থেকে সরে যাই।

আমার জীবনের যেসকল জায়গাগুলোতে ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রয়োজন ছিল সেগুলো আমি যেভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহের সিংহাসনের সামনে নিয়ে এসেছি সেগুলো আমি স্পষ্টভাবে বলতে যাচ্ছি। আমার জীবনে খাবারের সম্পূর্ণ ক্ষেত্রতেই আমার সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ছোটবেলায় আমার অনেক ওজন ছিল কিনা সেটা আমার মনে নেই, কিন্তু আমার এটা মনে আছে যে, যখন আমি ১০ম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমার বন্ধুরা (যাদের ওজন আমার থেকে কম ছিল) তাদের ওজন কতটা বেড়ে গেছে সেটা নিয়ে অভিযোগ করত। আর আমি ভাবতাম, ‘‘ওরা যদি নিজেদেরকে মোটা বলে দাবি করে এবং আমার যদি ওদের থেকে বেশি ওজন হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি অনেক মোটা!’’ সম্ভবত সেই সময়ে আমার ওজন ১১৮ ছিল। আর যখন খাবার আমার জীবনের মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই সময়টা আমার এখনও মনে আছে। আর যখন আমি এটা ভাবছিলাম যে আমার এই খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়, সেই সময়ে আমার আরও বেশি করে সেই খাবারগুলো খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেল।

আর আমার মা এই ধরণের কথা বলতেন, ‘‘আমার মনে হয় যে তুমি যদি এটা না খাও তাহলে তোমার কাপড়গুলো পড়লে তোমাকে আরও ভাল লাগবে। কেন তুমি ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করছ না?’’ এমনকি মা আমাকে ওজন কমানোর একজন ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেলেন।

যখন আমি এটা জেনে কলেজে যাই যে, আমার কিছু কিছু খাবার খাওয়া উচিত নয়, তখন আমি সেই খাবারগুলোই নিতাম এবং তারপর সেগুলোকে লুকিয়ে রাখতাম। আমি আমার ড্রয়ারে হার্সে বার লুকিয়ে রাখতাম। একবার তো আমি আস্ত একটা পাউন্ড কেক আমার বিছানার নিচে রেখে দিয়েছিলাম। আর যদি কেউ আমাকে এটা বলত যে তোমার এটা খাওয়া উচিত নয়, তাহলে আমার সেই খাবারটা খাওয়ার ইচ্ছা ১০গুণ বেড়ে যেত। আমার কলেজ চত্বরের কাছাকছি দুটো হ্যামবার্গারের দোকান ছিল। আমার মনে আছে যে আমি সেগুলোর একটা দোকানে যেতাম এবং একটি চিজবার্গার, ভাজি, আর একটি কোকাকোলা নিতাম আর সেগুলো খেতাম। তারপর আমি আমার গাড়িতে উঠে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বার্গারের দোকানে যেতাম এবং সেখানেও আমি আরেকটি চিজবার্গার, ভাজি আর একটা শেক্ নিয়ে খেতাম। আমি খাবার নিয়ে এতটাই বিভ্রান্তিতে ছিলাম যে এক দোকানের খাবার খেয়ে আবারও অন্য দোকানে গিয়ে খেতাম। আর যদি আমার হাতে কম সময় থাকত তাহলে আমি একটা দোকানে গিয়ে বলতাম, ‘‘দেখি তো। আমি একটা চিজবার্গার, ভাজি আর একটা কোক নেব।’’ তারপর আমি বলতাম, ‘‘এইমাত্র সে কি চেয়েছে? ও হ্যাঁ, সে একটা হ্যামবার্গার এবং ভাজি এবং তার সাথে একটা কোক চেয়েছে।’’ আমি এমনভাবে খাবার অর্ডার করতাম যেন আমি দুই জন ব্যক্তির জন্য খাবার নিচ্ছি। আর আমি বাইরে যেতাম এবং সবটুকুই খেয়ে নিতাম। আর আমি মিথ্যা বলতাম।

লুকানো থেকে মুক্তি

যখন আমি খ্রীষ্টের কাছে এলাম, তখন আমি যেমন ছিলাম তেমন ভাবেই তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন আর তারপর সারাবছর ধরেই আমার খাবার এর ক্ষেত্রে একটা দারুণ পরিবর্তন এসেছিল। আগে আমি একজন মাত্রাতিরিক্ত খাদক ছিলাম এবং এই কয়েক বছর ধরে প্রভু আমার এই মাত্রাতিরিক্ততা দূর করে দিয়েছেন।

কিন্তু মাঝেমধ্যে আমি অনেকটা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, বিশেষ করে আমার চিন্তাভাবনাগুলো নিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, আমি জানতাম যে আমাকে কিস্টোন, কলারোডোর বড় এক সম্মেলনে গিয়ে কথা বলতে হবে আর আমি ভেবেছিলাম যে, ‘‘আমাকে কিস্টোনে যাওয়ার আগেই ওজন কমাতে হবে।;; আমি খুব চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি তেমন ওজন কমাতে পারলাম না। তাই আমি চিন্তা করলাম যে,‘‘ঠিক আছে, আগামী সোমবার থেকেই আমি শুরু করব।’’ আর সম্মেলনে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসতে লাগল। আমি তখনও ১০ পাউন্ডের মত ওজন কমাতে চাইছিলাম। আমি যতই চেষ্টা করছিলাম ততটাই কম করতে পারছিলাম। আমি আমার প্রিয় একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে এই বিষয়ে বললাম যে, ‘‘কে তুমি জান যে, আমি আমার ওজন নিয়ে অনেক হতাশ। আমি তেমন উন্নতি করতে পারছি না। কিস্টোনে যাওয়ার আগে আমি ১০ পাউন্ড কমাতে চাই।’’ আমি ওকে আমার ওজন সম্পর্কে বললাম। আর ও আমার দিকে তাকাল এবং বলল,‘‘নে, তুমি কি মনে কর যে তুমি যদি ১০ পাউন্ড ওজন কমাও তাহলে কি লোকেরা তোমাকে বেশি ভালবাসবে?’’ আর কিছুক্ষণের জন্য আমার দম বন্ধ হল। আর আমি বললাম, ‘‘কে, তুমি জান যে, আমার মনে হয় আমার ভেতরের কিছু একটা তোমার বলা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানে।’’ আর সে আমার দিকে তাকালো এবং বলল,‘‘নে, তুমি যেমন আছ সেভাবেই আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমার কতটা ওজন বাড়ল বা কমলো সেটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।’’ আর আমি কাঁদতে লাগলাম। আমি যখন নিজেকে নম্র করলাম এবং আমার বন্ধু কে এর কাছে সত্য বললাম তখন সে আমাকে অনুগ্রহের অর্থ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিল। আর আপনি জানেন তো? আমি ভিতরে নতুন এক অনুপ্রেরণা পেলাম এবং কিছু ওজন কমাতে সক্ষম হলাম।

আইন যেটা করতে পারে নি অনুগ্রহ সেটা করতে পেরেছে। ইব্রীয় ১৩:৯, বলে যে, ‘‘সেইজন্য এস, তাঁর অসম্মান নিজেরা গ্রহণ করে আমরা শহরের বাইরে তাঁর কাছে যাই।’’ যদি আমরা ঈশ্বরের কাছে সততার সাথে আসি তাহলে তিনিও আমাদের জন্য একইরূপ করবেন।

লূক ১৮:৯-১৪ দেখুন, যেখানে যীশু একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন: ‘‘যারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে অন্যদের তুচ্ছ করত তাদের শিক্ষা দেবার জন্য যীশু এই কথা বললেন:“দুইজন লোক প্রার্থনা করবার জন্য উপাসনা-ঘরে গেলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরীশী ও অন্যজন কর্-আদায়কারী।সেই ফরীশী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই প্রার্থনা করলেন, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে, আমি অন্য লোকদের মত ঠগ, অসৎ ও ব্যভিচারী নই, এমন কি, ঐ কর্-আদায়কারীর মতও নই। আমি সপ্তাহে দু’বার উপবাস করি এবং আমার সমস্ত আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ তোমাকে দিই।’সেই সময় সেই কর্-আদায়কারী কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশের দিকে তাকাবারও তার সাহস হল না; সে বুক চাপ্ড়ে বলল, ‘হে ঈশ্বর! আমি পাপী; আমার প্রতি করুণা কর।’আমি তোমাদের বলছি, সেই কর্-আদায়কারীকে ঈশ্বর নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন আর সে বাড়ী ফিরে গেল। কিন্তু সেই ফরীশীকে তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন না। যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে এবং যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।”

সততা এবং বিশ্বাসের সাথে আসা

যদি আমরা নিজেদেরকে নম্র না করি এবং তাঁর অনুগ্রহ পেতে চাই, তাহলে সেখানে কোন সম্পর্কই থাকবে না। যখন আমরা প্রভুর কাছে আসি এবং আমাদের জীবনের দ্রুত ভেঙ্গে পড়া ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে তাঁকে বলি তখন তিনি আমাদের দেখা দেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় অনুগ্রহ দান করেন। ঈশ্বর এটা চাইছেন না যে আমরা নিজেদেরকে পরিবর্তিত করি। এর পরিবর্তে তিনি চান যেন আমরা তাঁর কাছে সততা এবং বিশ্বাসের সাথে আসি, এবং আমাদের সমস্ত চিন্তাভাবনার ভার তাঁর উপর দিই। (১ম পিতর ৫:৫-৭)

সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান লোক তারাই যারা তাদের দ্রুত ভেঙ্গে পড়া সম্পর্কে সচেতন এবং নিজেকে লুকিয়ে রাখার পরিবর্তে যারা বলতে পারে,‘‘প্রভু এই পাপীর প্রতি অনুগ্রহ কর।’’

ফরীশীরা পবিত্র হওয়া, আইন মেনে চলার জন্য অনেক চেষ্টা করত, কিন্তু তারা লোক দেখানোর জন্য এমনটা করত। যীশু তাদেরকে ‘‘চুনকাম করা কবর’’ এর সাথে তুলনা করেছেন। তাদের বাইরের দিকটা সুন্দর কিন্তু ভেতরে তারা মৃত এবং যীশুর প্রতি তাদের অন্তরে তিক্ততা ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তারা আইন নিয়ে বাড়াবাড়ি করত যেটা ছিল ‘‘বিশ্রামবারে কোন ধরনের কাজ না করা।’’ যখন যীশু, বিশ্রামবারের দিন একজনকে দয়া করে সুস্থ করেন তারা যীশুকে এই কাজের জন্য সমালোচনা করেছিল।

কখনও কখনও ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার চেয়ে আইনের সাথে সম্পর্ক রাখাটা সহজ। আর শয়তান ঈশ্বরের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে আইন (ঈশ্বরের আদেশ) এর প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করে।

আমরা কি ঈশ্বরের অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা পেতে চাই? তাহলে আমাদেরকে সত্য এবং নম্রতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যাকোব ৪:৬ বলে যে, ‘‘ঈশ্বর অহংকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কিন্তু নম্রদের দয়া করেন।’’

কয়েক বছর আগে, একজন যুবতী মহিলা একটি সম্মেলনের শেষের দিকে যোগ দিয়েছিল। তার মুখটা অন্ধকারময় ছিল এবং তাকে দেখে মনে হয়েছিল যে সে অনেক বিষাদগ্রস্থ এবং নিজেকে দোষী মনে করছে। আমরা যখন কথা বলা শুরু করলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে খ্রীষ্ট তার জীবনে আছেন, কিন্তু তার জীবনে এমন একটি অভ্যাস ছিল যেটার কারণে সে লজ্জিত ছিল। সে তার অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য বার বার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে তা পারে নি। সে তার অভ্যাসটিকে থামাতে পারে নি। এত প্রতিজ্ঞা এবং চেষ্টা করা সত্ত্বেও সে তা থামাতে পারে নি। আর যখন এটা ঘটল তখন সে নিজেকে অনেক খারাপ এবং দোষী মনে করল। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম যে, শয়তান আমাদের পাপের জন্য আমাদেরকে ভালবাসে এবং এটার মাধ্যমেই সে আমাদের মাথায় আঘাত করতে চায় এবং আমাদেরকে দোষারোপ করে। আর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কি তার এই বিষয়টিকে কখনও ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত করেছে কিনা। আর সে বলল না। এটা নিয়ে সে এতটাই লজ্জিত ছিল যে সেটাকে কখনই ঈশ্বরের কাছে নিয়ে যেতে পারে নি।

আমি বললাম, ‘‘পরবর্তীতে যখন তোমার আবারও এমনটা হবে, তখন তুমি নিজেকে লুকিয়ে না রেখে, নিজেকে দোষী মনে না করে, তোমার পাপের জন্য ঈশ্বরের ভালবাসার কথা স্মরণ করবে।’’ আমি তাকে বললাম যে যখন সে আবারও সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে তখন সেই বিষয়টিকে আলোর কাছে নিয়ে আসতে এবং এটা বলতে যে,‘‘প্রভু আমি যে তোমার হয়েছি সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিই। প্রভু, আমাকে ভালবাসার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। প্রভু, যীশু খ্রীষ্টের রক্ত আমার সকল পাপ মুছে দিয়েছে। প্রভু, আমি আমার পাপ কাজ বুঝতে পেরেছি, কিন্তু তুমি যদি আমাকে সাহায্য না কর তাহলে আমি কোনভাবেই পাপ থেকে মুক্তি পাব না। প্রভু, আমি আমার ইচ্ছা, ব্যক্তিস্বত্ত্বাকে তোমার কাছে এবং তোমার বাক্যের কাছে সমর্পিত করছি। তুমি কি আমার মধ্যে কাজ করবে এবং আমি নিজে যা করতে পারি না সেটা তোমার আত্মার দ্বারা আমার মধ্যে কাজ করাবে?’’

আামি তার সাথে প্রার্থনা করলাম এবং আমরা দুজনেই ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং শান্তির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম। এটা আমার কাছে স্পষ্ট যে, সে পরিবর্তিত হতে চেয়েছিল এবং তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল এবং সে তা করেছিল। কয়েক মাস পর আমি তার কাছ থেকে একটা চিরকুট পাই কারণ সে কেমন আছে সেটা আমাকে জানানোর জন্য আমি তাকে আগেই বলেছিলাম। সেই চিঠিতে সে বলল যে, আমি তাকে যা করতে বলেছিলাম সে তা করেছে এবং সে আরও বলল, ‘‘নে, এই কয়েক মাসের ব্যবধানে আমি অনেকটাই বিষ্মিত হয়েছি কারণ আমি আগে যেসকল সমস্যায় ছিলাম সেগুলো আগের থেকে অনেকাংশে কমে গিয়েছে।’’ সে পাপের কবলে নিমজ্জিত ছিল কিন্তু সে বাইরের দিকে অনুগ্রহের মধ্যে ছিল। যখন সে নিজেকে প্রভু এবং আমার কাছে নম্র করেছে এবং তার পাপকে ঈশ্বরের অনুগ্রহের আলোতে নিয়ে এসেছে তখন ঈশ্বর তাকে দেখা দিয়েছেন।

এটা পাওয়ার জন্য বিশ্বাস করতে হবে

ইব্রীয় ৪:১৩ বলে যে,‘‘সৃষ্টির কিছুই ঈশ্বরের কাছে লুকানো নেই। যাঁর কাছে আমাদের হিসাব দিতে হবে তাঁর চোখের সামনে সব কিছুই খোলা এবং প্রকাশিত।’’ রোমীয় ৫:২০ বলে,‘‘ যেখানে অন্যায় বাড়ল সেখানে ঈশ্বরের দয়াও আরও অনেক পরিমাণে বাড়ল।’’ ঈশ্বরের অনুগ্রহ সবসময় আমাদের উপরে আছে কিন্তু এই অনুগ্রহ পাবার জন্য আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে যে অনুগ্রহ রয়েছে সেটাকে আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, এটাকে পাবার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ঈশ্বরের অনুগ্রহে বিশ্বাস রাখতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি সাড়াদানের জন্য আমাদেরকে উত্তরমূলক বিশ্বাস রাখতে হবে। আর তিনি তা করবেন।

যদি আমি নিশ্চিতভাবে এটা জানতে পারি যে, ঈশ্বর বিশ্বস্ত, যদি আমি জানতে পারি যে তাঁর ভালবাসা সত্যিকারভাবেই সত্য, যেখানে তাঁর দয়া সম্পূর্ণ খাঁটি, তিনি নিশ্চিতভাবে আমাকে সমৃদ্ধশালী এক জীবন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন , তাহলে তিনি নিজ গুণেই কাজ করবেন। আমার ভেতরে যেখানে সত্যিকারের আমি বাস করি সেখানে তিনি আসবেন। তাঁর অনুগ্রহ আমাকে রূপান্তরিত করবে। এটা আমার ভেতরের গভীরতম অনুপ্রেরণাকে ছুঁয়ে যাবে যেটা আমার অন্তরকে পরিচালনা দেয় এবং তিনি আমাকে নতুন একজন ব্যক্তিতে পরিণত করবেন। আর ঈশ্বর আমাদের জন্য এটাই করতে চান। তিনি বলেন,‘‘, আমার আইন-কানুন আমি তাদের মনের মধ্যে রাখব এবং তাদের অন্তরেও তা লিখে রাখব। আমি তাদের ঈশ্বর হব আর তারা আমারই লোক হবে।’’ (ইব্রীয় ৮:১০) ঈশ্বর আমাদের জীবনে এমন কিছু করবেন যা বাহ্যিক আইন কখনই তা করতে পারবে না।

২য় করিন্থীয় ৩:১৮ বলে যে,‘‘ এইজন্য আমরা যারা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছি, আমরা সবাই খোলা মুখে আয়নায় দেখা ছবির মত করে প্রভুর মহিমা দেখতে দেখতে নিজেরাও মহিমায় বেড়ে উঠে বদলে গিয়ে তাঁরই মত হয়ে যাচ্ছি। প্রভুর, অর্থাৎ পবিত্র আত্মার শক্তিতেই এটা হয়।’’ পরিবর্তন হল একটি প্রক্রিয়া। যখন আমরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি এবং তাঁকে তাঁর বাক্যের মাধ্যমে বুঝতে পারি, তখন তিনি আমাদের হৃদয় এবং মনকে স্বাধীনভাবেই পরিবর্তন করেন। কিন্তু এখানে আমাদের বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তন রাতারাতি হয় না। এটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।

লুইস স্পেরি শেফার অনুগ্রহ সম্পর্কে দারুণ একটি বই লিখেছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘‘ঈশ্বরের বাক্যের অভিভূতকর সাক্ষ্য হল, পরিত্রাণের প্রতিটি দিক, ঐশ্বরিক অনুগ্রহের প্রতিটি আশীর্বাদ, সময় এবং অনন্তজীবন শুধুমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমেই পাওয়া যায়।’’

ঈশ্বর তাঁর অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাদেরকে রূপান্তরিত করেনं

তাহলে কিভাবে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা লাভ করি? আমরা আমাদের দুর্বলতা, অক্ষমতা, আমাদের পাপ এবং ব্যর্থতা নিয়ে ঈশ্বরের সামনে আসি। যখন আমরা তাঁর অনুগ্রহের বিশ্রামে থাকি তখন আমরা তাঁর ভালবাসা এবং তিনি যে আমাদেরকে পরিবর্তন করতে পারেন এটাকে বিশ্বাস করাকে বেছে নিই।

২য় পিতর ৩:১৮ বলে যে,‘‘ তোমরা আমাদের প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের দয়ায় ও তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞানে বেড়ে উঠতে থাক।’’

লূক ১৫ অধ্যায়ে অপব্যয়ী পুত্রের গল্পটিতে আমরা দেখি যে, সেই অপব্যয়ী ছেলেটি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে তার বাবার সম্পদ নষ্ট করেছিল, কিন্তু শেষপর্যায়ে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল আর সে তার বাবার মমতায় ঠাঁই পেয়েছিল।(১৭ পদ) ‘‘আমার বাবার কত মজুর কত বেশী খাবার পাচ্ছে, অথচ আমি এখানে খিদেতে মরছি।আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি।কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই। তোমার মজুরদের একজনের মত করে আমাকে রাখ।’’ সে নিজেকে নম্র করেছিল এবং নিজের মন ঠিক করল এবং সে তার বাবার কাছে ফিরে গেল। বাবার কাছে ফিরে গিয়ে সে তার বাবাকে সত্য বলল। কিন্তু আপনি জানেন কি? ছেলেটির বড় ভাই এটা একদমই পছন্দ করল না। এই ছেলেটির প্রতি অনুগ্রহের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার বড় ভাই তার পিতার প্রতিবাদ করল যেটি আইনতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে। কারণ তার বড় ভাই বলছিল, তার ছোট ভাই আইন অমান্য করেছে, এই কারণে সে আপনার অনুগ্রহ পাবার যোগ্য নয়। কিন্তু সেই অপব্যয়ী ছেলেটি যাই করুক না কেন সেই বাবা তাকে তখনও ভালবেসেছে।

ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক যেকোন আইনের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। শয়তান আমাদেরকে আইনতন্ত্রের মাধ্যমে আইনের সাথে সম্পর্কযুক্ত করতে চায় যাতে আমরা সব সময় অপরাধবোধ এবং নিজেরদেরকে দোষারোপ করে চলি। কিন্তু সদাপ্রভু রোমীয় ৮:১ পদে বলেন, ‘‘যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।’’ তাঁর অনুগ্রহের নিচে আমরা নিজেদের ক্ষমতার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারি। তাঁর ইচ্ছামত চলার জন্য পবিত্র আত্মা আমাদেরকে পরিচালনা দান করেন। আত্নিক পূর্ণতার জীবনের অর্থ হল প্রতিটি মুহূর্তেই তাঁর অনুগ্রহ বুঝতে পারা। যখন আমি ব্যর্থ হই কিন্তু তারপরও এই ব্যর্থতাকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসি তখনই আমরা আত্মিক পূর্ণতার অর্থ বুঝতে পারি। এটা তখনই হয় যখন আমরা আমাদের পাপের দায়ভারগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে নিই এবং আমাদেরকে পরিবর্তন করে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করি।

যীশু ক্রশে আমাদের পাপ এবং আমাদের মন্দতার জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমরা অপরাধী ছিলাম কিন্তু তিনি আমাদের অপরাধের মূল্য দিয়েছেন। যখন আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি, যখন আমরা খারাপ কাজগুলো করা থেকে নিজেদের বিরত রাখি তখন আমরা বুঝতে পারি যে যীশু অনেক আগেই আমাদের পাপের মূল্য দিয়ে দিয়েছেন। ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্বকারী কোন পুরুষ বা মহিলা হওয়ার অর্থ হল আমরা আমাদের পাপের জন্য নম্র এবং সত্যবাদী হব এবং আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ এবং বৃদ্ধি পাওয়াকে গ্রহণ করব।

জন পাওয়েল বলেছেন যে,‘‘ আমরা মনে করি যে ভালবাসা পাবার জন্য আমাদেরকে পরিবর্তিত হতে হবে, বৃদ্ধি পেতে হবে এবং ভাল মানুষ হতে হবে। কিন্তু আমাদেরকে অনেক আগেই ভালবাসা হয়েছে এবং আমরা যাতে পরিবর্তিত, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এবং ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারি সেজন্যই আমরা তাঁর অনুগ্রহ পাই। ’’

আমাদের জীবনে সুস্থতা লাভের একমাত্র সীমাবদ্ধতা হল যোগ্যতা যেটা আমরা নিজেরাই প্রকাশ করি না। বৃদ্ধি পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সত্যের সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ আমাদের ঈশ্বরের মুখোমুখি হওয়া এবং ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে আমাদের সত্যতা সম্পর্কে ঈশ্বরের মুখোমুখি হওয়ার স্বাধীনতা দেয়। যখন আমরা এটা জানব যে তিনি আমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ভালবেসেছেন এবং আমরা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্যে তখন আমরা বুঝতে পারব যে তিনি আমাদেরকে সমস্ত কিছু নিয়ে তাঁর কাছে আসতে বলেছেন যাতে তিনি আমাদের স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা অর্জনে (যোহন ৮:৩২) এবং আরও সমৃদ্ধশালী জীবন পেতে সহায়তা করতে পারেন (যোহন ১০:১০)।

আর কোন দোষ নেই

আমার মনে আছে, একজন যুবতী মেয়ে আমার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছিল। তার বর্ণনানুসারে, সে খেতে পারতো না, তার নিজের প্রতি দারুণ অপরাধবোধ ছিল, আর সে ঘুমাতেও পারত না। সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দোষী মনে করত, এবং তার মধ্যে অনেক ভয় এবং বিভ্রান্তি ছিল। যে কারণে এমনটা অনুভব করছিল সেটা হল সে অনৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। ঈশ্বরের বাক্য যা বলে তা সে জানত কিন্তু সে যে এভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যাবে তা সে বুঝতে পারে নি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার মানহানি করা হয়েছিল আর প্রত্যাখ্যিত হবার ভয়ে সে এই বিষয়ে কাউকে বলতেও পারে নি। সে তার মাথা নিচু করে পুরো ঘটনাটি বলল। সে আমার কাছে কোন কিছুই লুকায় নি কারণ তার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। সে সত্যিই তার পাপের জন্য অনুতপ্ত ছিল। সে অনুতপ্ত ছিল। আমার সামনে, সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার পাপ স্বীকার করেছিল এবং ঈশ্বরের ক্ষমা এবং অনুগ্রহ পেয়েছিল। সে আমাকে পরে বলেছিল যে, যখন সে এসেছিল তখন সে অভ্যন্তরীণ মানসিক কারাগারে ছিল। এবং প্রত্যাখ্যিত হবার পরিবর্তে সে এখানে এসে যা পেয়েছিল তা হল ভালবাসা এবং গ্রহণযোগ্যতা।

কয়েক মাস পর আমি একটি চিঠি পাই। সে বলেছিল যে, ‘‘আমার শেকলগুলো খুলে গেল, অন্ধকূপের দরজাটি খুলে গেল, আমার উপর থেকে হাজার পাউন্ড ওজনের বোঝা নেমে গেল। আমি তখন স্বাধীনতা এবং সতেজতা অনুভব করছিলাম। যখন আমি আপনার সাথে ছিলাম তখন আমি কিছুই করি নি। আপনি যা করেছিলেন সেটাই মূল কাজ। আপনিই সেখানে ছিলেন। আপনি আমার কাছে ঈশ্বরের ভালবাসা, গ্রহণযোগ্যতা এবং ক্ষমার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।’’ সেই সময়ে আমি তখন তাকে আমার কাছে জবাবদিহি করতে বলেছিলাম এবং পরে সে আমাকে বলেছিল যে জবাবদিহিতা কখনই তার কাছে বোঝার মতো মনে হয় না। কিন্তু এটাকে নিরাপদ বলে মনে হয়েছে কারণ সে এমন একজনের কাছে জবাবদিহি করেছে যিনি তার কাছে অনুগ্রহের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সে আরও সাহায্য পাবার জন্য গিয়েছিল এবং সে বুঝতে পারল যে তার আরও সাহায্যের প্রয়োজন। সে বলেছিল যে, যখন সে অনুগ্রহের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল তখন সেটি তার কাছে ধর্মতত্বের চাইতেও বেশি কিছু মনে হয়েছিল।

যে আইন ভাল, পবিত্র এবং খাঁটি সেটিই তার পাপকে আয়নার মত তুলে ধরেছে। সে নিজেকে নত করেছে। সে পাপ স্বীকার করেছে। সে নিজের কাছে, আমার কাছে, প্রভুর কাছে সত্য বিষয়টিই বলেছে। আর তার প্রয়োজনের সময়ই সে তার জীবনে অনুগ্রহ লাভ করেছিল। নিজের পাপকে আলোর পথে এবং ঈশ্বরের নম্রতা এবং সত্যের সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে সে ঈশ্বরের অনুগ্রহ এবং স্বাধীন জীবনের পথে চলতে পারছে।

আপনার জীবনের এমন দিকগুলোর কথা চিন্তা করুন যেখানে আপনি নিজেকে দোষী মনে করেন বা প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে থাকেন... এমন কোন জায়গা যেখানে আপনি নিজেকে খাঁটি মনে করেন না। যেখানে আমরা ঈশ্বরের আইনের কারণে দূরে সরে যাচ্ছি সেইসব ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের তাঁর কাছে নম্রতা এবং সত্যের সাথে আসতে হবে। এখানে লুকানোর কিছু নেই। এখানে মিথ্যে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এখানে নিজেকে দোষী মনে করারও কিছু নেই।

‘‘যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না।জীবনদাতা পবিত্র আত্মার নিয়মই খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাকে পাপ ও মৃত্যুর নিয়ম থেকে মুক্ত করেছে।মানুষের পাপ-স্বভাবের দরুন আইন-কানুন শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল, আর সেইজন্য আইন-কানুন যা করতে পারে নি ঈশ্বর নিজে তা করেছেন। তিনি পাপ দূর করবার জন্য নিজের নিষ্পাপ পুত্রকে মানুষের স্বভাব দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পাপের বিচার করে তার শক্তিকে বাতিল করে দিলেন।তিনি তা করলেন যেন পাপ-স্বভাবের অধীনে না চলে পবিত্র আত্মার অধীনে চলবার দরুন আমাদের মধ্যে আইন-কানুনের দাবি-দাওয়া পূর্ণ হয়।’’ (রোমীয় ৮:১-৪)

‘‘ঈশ্বর অহংকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কিন্তু নম্রদের দয়া করেন।”সেইজন্য ঈশ্বরের ক্ষমতার সামনে নিজেদের নীচু কর, যেন ঠিক সময়ে তিনি তোমাদের উঁচু করেন।তোমাদের সব চিন্তা-ভাবনার ভার তাঁর উপর ফেলে দাও, কারণ তিনি তোমাদের বিষয়ে চিন্তা করেন।’’ (১ম পিতর ৫:৫-৭)

‘‘ঈশ্বর যখন আমাদের পক্ষে আছেন তখন আমাদের ক্ষতি করবার কে আছে? ঈশ্বর নিজের পুত্রকে পর্যন্ত রেহাই দিলেন না বরং আমাদের সকলের জন্য তাঁকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিলেন। তাহলে তিনি কি পুত্রের সংগে আর সব কিছুও আমাদের দান করবেন না?... সেই খ্রীষ্ট যীশু এখন ...আমাদের জন্য অনুরোধ করছেন। কাজেই এমন কি আছে যা খ্রীষ্টের ভালবাসা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেবে? যন্ত্রণা? মনের কষ্ট? অত্যাচার? খিদে? কাপড়-চোপড়ের অভাব? বিপদ? মৃত্যু? আমি এই কথা ভাল করেই জানি, মৃত্যু বা জীবন, স্বর্গদূত বা শয়তানের দূত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন কিছু কিম্বা অন্য কোন রকম শক্তি, অথবা আকাশের উপরের বা পৃথিবীর নীচের কোন কিছু, এমন কি, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে কোন ব্যাপারই ঈশ্বরের ভালবাসা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না।’’ (রোমীয় ৮:৩১-৩৯)

ফ্রি ফর দ্যা টেকিং- দ্যা লাইফ চেন্জিং পাওয়ার অফ গ্রেস, যোষেফ আর. কোক এর লেখা (ছাপানোর বাইরে)